একাই প্রচারে জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ধর্তিমোহন রায়।
ঘাসফুলের ছবি, পতাকা নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থীর অপেক্ষায়। তিনি এলেই শুরু হবে মহামিছিল। তিনি এলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মোবাইল বেজে উঠল। সংক্ষেপে কথা সেরেই উঠে পড়লেন গাড়িতে। প্রার্থীর সঙ্গে থাকা এক অনুগামী গাড়িতে ওঠার মুখে কোনও ক্রমে এক নিশ্বাসে জানিয়ে গেলেন, ‘‘এই মিছিলে হাঁটা যাবে না। উপর থেকে নিষেধ আছে।’’
রবিবার জলপাইগুড়ির নেতাজিপাড়ায় যুব তৃণমূলের মহামিছিল শুরুর সময় এ ভাবেই প্রকাশ্যে এসেছে দুই গোষ্ঠীর টানাপোড়েন। তৃণমূল সূত্রের খবর, সে দিন মিছিলে তৃণমূল প্রার্থী ধর্তিমোহন রায় উপস্থিত হওয়ার পরে, তাঁর মোবাইলে দলের এক জেলা নেতার ফোন আসে। ওই নেতা ফোনে প্রার্থীকে জানান, যুব তৃণমূলের মিছিলে হাঁটলে সেই এলাকার সিংহভাগ তৃণমূলকর্মী ক্ষুব্ধ হবেন এবং ভোটের কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবেন। এই ঘটনায় ওই জেলা নেতার বিরুদ্ধে যুব তৃণমূলের এক নেতা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জলপাইগুড়িতে নতুন কোনও চর্চার বিষয় নয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব সকলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ধর্তিমোহন রায়কে প্রার্থী করেছিল বলে খবর। যদিও, প্রার্থী ঘোষণার পর, প্রচার কাদের সিদ্ধান্তে নিয়ন্ত্রিত হবে তা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছায়া ফেলে জলপাইগুড়িতে। জেলা তৃণমূলের অন্দরের খবর, নানা উপবিভাজন বাদ দিলে, জলপাইগুড়িতে জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী এবং জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে বিরোধই বারবার প্রকাশ্যে এসেছে।
দলের তিন প্রাক্তন জেলা সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী, কৃষ্ণকুমার কল্যাণী এবং চন্দন ভৌমিকেরও নিজস্ব অনুগামী বৃত্ত রয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান তথা জেলা তৃণমূলের শহর ব্লক সভাপতি মোহন বসুর অনুগামীরাও শহর-রাজনীতিতে সক্রিয়। জেলা সভাপতি সৌরভবাবু নিজে আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী। তিনি সেখানেই প্রচারে ব্যস্ত। তার ফলে জলপাইগুড়িতে তাঁর অনুগামীরা ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে পড়েছেন বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি। আর সেই সুযোগ নিতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দলে সৌরভবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীতে থাকা নেতারা।
প্রচারের শুরুতেই সৈকতবাবু সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেছিলেন, জেলা সভাপতি আলিপুরদুয়ারে প্রচারে ব্যস্ত। তাই প্রচারের যাবতীয় ভার এখন তাঁদেরই হাতে। সেই সাংবাদিক বৈঠকের পর রাত পোহাতেই আলিপুরদুয়ার থেকে জলপাইগুড়িতে এসে পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে সৌরভবাবু দাবি করেন সৈকতবাবুর দাবির ভিত্তি নেই, প্রচারের ভার ব্লক সভাপতি-সহ নানা পদাধিকারীদের।
সম্প্রতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ময়নাগুড়ির সভায় এসে জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনকে চেয়ারম্যান করে নতুন কমিটি গঠন করে দেন। দলের প্রবীণ নেতাদের দাবি, তার ফলে দ্বন্দ্ব কমা তো দূরের কথা, নতুন আর একটি বিভাজন তৈরি হয়েছে।
সৌরভবাবু থেকে শুরু করে সৈকতবাবু, বিজয়বাবু, মোহনবাবু প্রাক্তন জেলা সভাপতিরা সকলেই দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেছেন। দলের সব নেতারাই একসঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ধর্তিমোহনবাবুও। যদিও, জলপাইগুড়িতে এখন সাতটি পার্টি অফিস থেকে ভোটের কাজ পরিচালনা হচ্ছে বলে তৃণমূল কর্মীদের দাবি। একটি অফিস থানা রোডে, একটি অফিস ডিবিসি রোডে, কদমতলা, উকিলপাড়া, মার্চেন্ট রোড, পাটগোলা, তিন নম্বর ঘুমটি, স্টেশন রোডের এক একজন পার্টি অফিসে এক একজন নেতা বসেন। দলনেত্রীর নির্দেশেও কাজ হয়নি, তবে ভোটের আগে কর্মীদের মনে উঁকি দিচ্ছে একটিই প্রশ্ন, নানা ঠিকানার নানা পথে দলের ভোট বিপথে চলে যাবে না তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy