Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিশু কার? আগলে ভিক্ষুক

ভিক্ষে করেই দিন চলে পুতলির। ছোটবেলায় পুড়ে গিয়েছিল দেহের বেশ কিছুটা অংশ। ইটাহারের বাসিন্দা পুতলি শিলিগুড়ি জংশনে ভিক্ষে করে দেশের বাড়িতে দুই বোনের পড়ার খরচ জোগান।

আঁকড়ে: স্টেশন থেকে উদ্ধার করা শিশুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে পুতলি। সামনে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

আঁকড়ে: স্টেশন থেকে উদ্ধার করা শিশুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে পুতলি। সামনে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০০
Share: Save:

নিজে চালচুলোহীন। ভিক্ষে করে পেট চালান। তবু স্টেশনে যখন দেখতে পেলেন বছর পাঁচেকের শিশুটি ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগিয়ে এসে তার হাত ধরলেন পুতলি খাতুন। এবং তাকে আগলে রাখলেন দেড় দিন। সোমবার তিনি শিশুটিকে শিলিগুড়ি আদালতে নিয়ে এলে জানতে পারে পুলিশ। পরে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হচ্ছে শিশু সুরক্ষা কমিটির হাতে।

ভিক্ষে করেই দিন চলে পুতলির। ছোটবেলায় পুড়ে গিয়েছিল দেহের বেশ কিছুটা অংশ। ইটাহারের বাসিন্দা পুতলি শিলিগুড়ি জংশনে ভিক্ষে করে দেশের বাড়িতে দুই বোনের পড়ার খরচ জোগান। রাতে থাকেন এনজেপি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। তাঁর হাত ধরেই নতুন জীবন ফিরে পেল আলিপুরদুয়ারের এক আদিবাসী পরিবারের মেয়ে। পুতলি বলেন, ‘‘শনিবার রাত ১০টা নাগাদ স্টেশনে দেখি, শিশুটি একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন কয়েক জন রিকশাওয়ালা তাকে নিয়ে যেতে চাইছিল। মেয়েটির তখন চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়। আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসি। তার পর এনজেপির কয়েক জন ভিক্ষুক মিলে ঠিক করি, শিশুটিকে আদালতে তুলে দেব।’’

শনিবার রাতে শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে কেন এনজেপি স্টেশনে নিজের কাছেই রাখলেন পুতলি? কেন রেল পুলিশের কাছে নিয়ে গেলেন না? পুতুলির দাবি, রাতে এলাকায় রেল পুলিশ দেখতে পাননি তিনি। নিজেও সারাদিন ভিক্ষের পর ক্লান্ত ছিলেন। তার উপর কয়েক জন বাচ্চাটিকে কেড়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিতে পারে— এই ভয়ে তিনি শিশুটিকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চাইছিলেন না। পুতলির দাবি, বাচ্চা মেয়েটি শুধু নিজের নাম আর আলিপুরদুয়ারে বাড়ির কথা বলতে পারছিল। তার থেকে কী করে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, সেটা বুঝতে পারছিলেন না পুতলি।

তবে এই দেড় দিনের মধ্যে পুতলি একবারের জন্যও শিশুটিকে কাছ ছাড়া করেননি। সব সময় তাকে আগলে রেখেছেন, সঙ্গে রেখেছেন। শিশুটিও যেন তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছিল কাছের মানুষ। পুলিশ যখন নিতে আসে তাকে, সে পুতলির হাত ছাড়তেই চাইছিল না। আঁকড়ে থাকছিল তাঁকে।

পুতলির অবশ্য তখন অবস্থা খারাপ। একে নিজের জন্য বিশেষ কিছু জোটেনি। তার উপরে দুধের শিশুকে কী খেতে দেবেন, সেই চিন্তায় মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। কিন্তু পুলিশের নাম শুনলেই শিশুটি কেঁদে ফেলছে। শেষে এ দিন সকালে তাকে নিয়ে শিলিগুড়ি আদালতের সামনে হাজির হন পুতলি। কথায় কথায় স্থানীয় দোকানদার এবং আদালতের কর্মীরা সব কিছু জানতে পারেন। তাঁরাই খবর দেন পুলিশে। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ এসে পুতলির কাছ থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে যায়। কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আমরা চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে বাচ্চাটিকে শিশু সুরক্ষা কমিটির হাতে তুলে দিচ্ছি।’’ প্রায় ৩০ ঘণ্টার উপর ওই ভিক্ষুকের সঙ্গে বাচ্চাটি সময় কাটিয়েছে দু’টি স্টেশন চত্বরেই। কিন্তু তাও রেল পুলিশ বা আরপিএফের নজরে কেন বিষয়টি এল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্টেশনে নজরদারি কমছে বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Siliguri Rail Begger Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE