প্রতীকী ছবি।
কমিটি তৈরি হয়েছিল দু’বছর আগে। উদ্দেশ্য, চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি দেখভাল করা। অভিযোগ, দু’বছরে গোটা দশেক বৈঠক হলেও মজুরি সংক্রান্ত কোনও রূপরেখা তৈরি হয়নি। নিজেদের দাবিপূরণ থেকে এখনও বঞ্চিত শ্রমিকেরা।
কিন্তু ভোট বড় বালাই! কয়েকমাস পরেই লোকসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে চা বাগান এলাকায় সেই কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকল রাজ্য সরকার। আগামী ১৩ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির মৈনাক টুরিস্ট লজে চা বাগান শ্রমিকরদের ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত সরকারি পরামর্শদাতা কমিটির সেই বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়েছেন, কমিটির সদস্য সচিব তথা রাজ্যের শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার।
উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখতে হলে চা বলয়ের ভোট নিজেদের পক্ষে রাখা যে সর্বাগ্রে জরুরি, তা স্বীকার করেন ডান-বাম সব দলই। শিলিগুড়ি বাদে অন্য এলাকায় পঞ্চায়েত বা বিধানসভায় সাফল্য না পেলেও এখনও চা বাগানগুলিতে লাগাতার আন্দোলন চালাচ্ছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন। চা বলয়ে ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেস। সংগঠন গোছাতে বাগানে বাগানে ইউনিট কমিটির সভা করেছে বিজেপিও। রাজ্য শ্রম দফতরের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের ২৭৬টি নথিভুক্ত চা বাগান আছে। সেখানে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ লোক বসবাস করেন। ওই জনসংখ্যার একটা বড় অংশই ভোটার। বিশ্লেষকদের মতে, সেই ভোট কব্জা করতে ন্যূনতম মজুরিকেই হাতিয়ার করতে চাইছে রাজনৈতিক দলগুলি। তাই কি এই তড়িঘড়ি বৈঠকের ঘোষণা? উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হলে সেই কৃতিত্বের দাবিদার হতে পারবে দল। আর লোকসভা ভোটে তার ফায়দাও নিতে পারবেন তাঁরা।
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে তৈরি হয়েছিল এই কমিটি। কমিটিতে রাজ্য সরকার, চা বাগান মালিক এবং শ্রমিক— তিন পক্ষের প্রতিনিধিরাই আছেন। কীভাবে ন্যূনতম মজুরি ঠিক হবে, তার পরিমাণ কত হবে, কীভাবে তা বলবৎ হবে এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই কমিটি তৈরি করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তবে কমিটির শ্রমিক প্রতিনিধিদের অভিযোগ, দু’বছরে গোটা দশেক বৈঠক হয়েছে। কোথাও মজুরি সংক্রান্ত কোনও রূপরেখা তৈরি হয়নি। বর্তমানে চা বাগান শ্রমিকরা দৈনিক ১৬৯ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি ন্যূনতম মজুরি হিসাবে দৈনিক ৩০০-৩২০ টাকা দাবি করেছে।
কমিটির সদস্য কংগ্রেস নেতা মণিকুমার ডার্নাল বলেন, ‘‘বছরখানেক আগে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি হয়েছিল। তবে সেটা নিয়েও কোনও উচ্চবাচ্য নেই রাজ্য সরকারের। কমিটি তৈরি হয়েছে লোক দেখাতে।’’ শ্রমমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই কমিটিই ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা রূপরেখা তৈরির কাজ করছি। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মজুরি ঘোষণা করা হবে।’’
তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের আমলেই চা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি মজুরি পেয়েছেন। তাই লোকসভা ভোটে তাঁরা আমাদের পাশেই থাকবেন।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বাম ও তৃণমূল দুই আমলেই চা বাগান শ্রমিকরা সবদিক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবারের ভোটে তাঁরা আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy