Advertisement
E-Paper

জেলে খেতে দিচ্ছে? চিন্তা মায়ের

নিজের মনেই বিড়বিড় করেন আশিয়া, ‘‘ছোট ছেলেটার খবর পাচ্ছি না। বড় ছেলেও ওখানে গিয়েছে। শুধু বলে, মা চিন্তা করিস না। কিন্তু ছেলে তো এখনও জেলে। চিন্তা করব না! ও কী খাচ্ছে, খেতে দিচ্ছে কি না কে জানে।’’

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩২
উৎকণ্ঠা: কবে ফিরবে ছেলে, অপেক্ষায় সানজুরের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

উৎকণ্ঠা: কবে ফিরবে ছেলে, অপেক্ষায় সানজুরের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনে দিয়ে দু’দিকে গিয়েছে দু’টি রাস্তা। দিনপনেরো ধরে বাড়ির বারান্দায় বসে রাস্তার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকেন আশিয়া বিবি। পরিচিত কাউকে রাস্তায় দেখলেই জিজ্ঞাসা করেন— ‘‘ছেলেটার কোনও খবর পেলে?’’

উত্তর দিতে পারেন না কেউ-ই। নিজের মনেই বিড়বিড় করেন আশিয়া, ‘‘ছোট ছেলেটার খবর পাচ্ছি না। বড় ছেলেও ওখানে গিয়েছে। শুধু বলে, মা চিন্তা করিস না। কিন্তু ছেলে তো এখনও জেলে। চিন্তা করব না! ও কী খাচ্ছে, খেতে দিচ্ছে কি না কে জানে।’’

সানজুর আলির মা আশিয়া। উত্তরপ্রদেশে হিংসার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ছ’জনের মধ্যে রয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ডাঙ্গিলার সানজুরও। ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকেই আশিয়া বিবির মতোই উদ্বেগে দিন কাটছে অন্য ধৃতদের পরিজনদেরও।

লখনউয়ে তুলসীবাজারে গোলমালে জড়িত সন্দেহে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ডাঙ্গিলার চার ও জনমদোল এলাকার দু’জনকে গ্রেফতার করে। তার পর থেকে তাঁরা জেল হেফাজতে রয়েছে। ঘরের ছেলেরা কী ভাবে ছাড়া পাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় দিশাহারা পরিবার। তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। স্থানীয় সূত্রে খবর, লখনউয়ে যে হোটেলে ধৃতেরা কাজ করতেন তার মালিকও জামিনের চেষ্টা করছেন বলে খবর মিলেছে।

কিন্তু দু’সপ্তাহ পরেও ইতিবাচক কোনও খবর না পেয়ে উদ্বিগ্ন পরিজনেরা। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার খাইরুল হক ও খালেদুল হকের দাদা সালেদুল সেখানে রয়েছেন। তিন দিন আগে লখনউয়ে গিয়েছেন সাগর আলির দাদা আকবর আলি। সানজুরের দাদা তানজুর আলিও সেখানে। কিন্তু লখনউয়ে কোনও আইনজীবী ঠিক করা বা ধৃতদের সাহায্য করার মতো ক্ষমতা তাঁদের নেই। প্রত্যেকেরই ভরসা তাঁদের আত্মীয়েরা যে সব হোটেলে কাজ করতেন তার মালিকেরাই।

খাইরুল লখনউয়ের যে হোটেলে কাজ করতেন সেটির মালিক উত্তম কাশ্যপ এ দিনও ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘চিন্তার কিছু নেই। যে ভাবেই হোক দুই ভাইকে ছাড়িয়ে আনব। অন্যরা যে সব হোটেলে কাজ করত সেগুলির মালিকেরাও একই ভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটু সময় তো লাগবে।’’ সানজুরের দাদা তানজুরও এ দিন জানিয়েছেন, ‘‘জেলে সবার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। ওরা ছাড়া না পাওয়া পর্য়ন্ত তো কিছু বলার নেই। তাই বাড়ি থেকে ফোন করলে চিন্তার কিছু নেই, এটুকুই বলছি।’’

কিন্তু ফোনে সেই ‘আশা’য় যে ঘরের কেউ তত স্বস্তি পাচ্ছেন না, তা আশিয়া বিবির মতো জনমদোলের আসলামের বাবা আব্দুল কালামের কথাতেও স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘লখনউয়ে ফোন করলে শুধু বলছে, চিন্তার কিছু নেই। কবে ছেলে ছাড়া পাবে সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী পাশে থাকার কথা বলেছেন শুনে বুকে সাহস পেয়েছি।’’

Hindu Muslim NRC CAA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy