Advertisement
E-Paper

জীবনের বাধা টপকে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোই স্বপ্ন ভারতী, অনিতার

ব্লকের লস্করহাট এলাকার একই পাড়ার বাসিন্দা দু’টি পরিবারের দুই তরুণী। বয়স বছর চব্বিশ। দু’জনেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াই চালাচ্ছেন। প্রথম জন ভারতী বিশ্বাস—হুইলচেয়ারে বসে তাঁত বুনে বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৬
ভারতী ও অনিতা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

ভারতী ও অনিতা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

ব্লকের লস্করহাট এলাকার একই পাড়ার বাসিন্দা দু’টি পরিবারের দুই তরুণী। বয়স বছর চব্বিশ। দু’জনেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াই চালাচ্ছেন। প্রথম জন ভারতী বিশ্বাস—হুইলচেয়ারে বসে তাঁত বুনে বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অন্য জন অনিতা বিশ্বাস—বিএ পাশ করে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেন। এর সঙ্গে টিউশন করে দরিদ্র পরিবারকে সাহায্যের চেষ্টাও করেন। তাঁদের দু’জনেরই স্বপ্ন, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে।

এলাকার প্রাথমিক স্কুলের পিছনেই থাকেন ভারতী ও তাঁর বৃদ্ধা মা পালনদেবী। ১৭ বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন ভারতী। পালনদেবী জানান, দু’বছর বয়সে ভারতীর জ্বর হয়েছিল। তখন নদিয়ার শান্তিপুরে মাসির বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন পালনদেবী। সংজ্ঞাহীন, অসাড় ভারতীকে নিয়ে কলকাতার পোলিও হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তিন মাস তার চিকিৎসা হয়েছিল। প্রাণে বাঁচলেও কোমরের নীচের অংশের সাড় ফেরেনি। ফলে প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েই বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। কিন্তু তাতে জীবন থেকে পালিয়ে যাননি তিনি। হুইলচেয়ারে বসেই পাশের বাড়িতে তাঁত বুনে কোনও মতে চলে। প্রায় ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ভারতী বলেন, ‘‘ইদানিং শরীরে জোর পাই না বলে কিছু দিন হল তাঁত বুনতে পারছি না।’’ বছর চারেক ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসাবে ভারতী মাসে ৭৫০ টাকা করে পান। তবে তা অনিয়মিত। ভারতীর কথায়, ‘‘ন’মাস পরে নভেম্বরে দু’মাসের ভাতার টাকা পেলাম। বাকি টাকা কবে পাবো জানি না। ভাবতে অবাক লাগে যে, বেঁচে আছি।’’

ওই এলাকারই বাসিন্দা অনিতাও আড়াই বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন। বাবা পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি। তিন বোন ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে অনিতা মেজ। প্রায় ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনিতার স্কুলে যাওয়া। বাড়ি থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে তিলন হাইস্কুল। এরপর ২৬ কিলোমিটার দূরে বাসে যাতায়াত করে গঙ্গারামপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ। মাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৭৫ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছেন তিনি। বিএতে ৪১ শতাংশ। অর্থাভাবে আর তাঁর পড়া হয়নি।

মা মীরাদেবীর কথায়, ‘‘মেয়েটার লেখাপড়ার দিকে খুব আগ্রহ। কিন্তু অভাবের সংসারে মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাড় করা অসম্ভব।’’ এখনও কোনও সরকারি ভাতা কিংবা সহায়তা জোটেনি অনিতার। ওঁর অভিযোগ, বিডিও অফিস ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি। বাড়িতে বাচ্চাদের টিউশন পড়িয়ে আর সেলাইয়ের কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই করছেন।

তার ফাঁকেই কবিতা লিখতে বসে যান অনিতা। ছন্দ সাজিয়ে স্বপ্ন বোনেন। হস্তচালিত তাঁতের খটাখট শব্দ তুলে চোখ জুডনো নকশা ফুটিয়ে তোলেন ভারতী।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy