বাড়ি ফেরা হল না রঞ্জিত বর্মণের। নিজস্ব চিত্র।
মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাজস্থান থেকে কোচবিহারের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় পড়ে আর বাড়ি ফেরা হল না। বাড়ি ফিরল রঞ্জিত বর্মণের মৃতদেহ। শোকস্তব্ধ কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের লতাপাতা গ্রাম।
লতাপাতা গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত গত কুড়ি বছর ধরে রাজস্থানের জয়পুরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। কতই আর আয় তাতে। আড়াই বছরের কন্যা সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। কারণ শিশু সন্তান জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগে। স্বামীর অবর্তমানে বাপের বা়ড়িতে থাকলে মেয়ের পরিচর্চায় সুবিধা হয় মায়ের। আড়াই বছরের কন্যার হার্টে জটিল রোগ। এর ফলে প্রায়ই অসুস্থ থাকত সে। সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় আড়াই বছরের শিশুটি। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আড়াই বছরের শিশু।
আচমকা এই খবর পেয়ে ভেঙে পড়েন রঞ্জিত। সম্বিত ফিরতেই জয়পুর থেকে বাড়ির চেষ্টা করতে থাকেন। এ দিকে পকেট শূন্য। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে পাঠানো টাকায় ট্রেনের টিকিট কেটে রওনা দেন বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে।
ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে অনর্গল কথা বলেছেন, অনবরত সাহস যুগিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, আসছি আমি। শেষ কথা হয়, ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছলে। তখন স্ত্রীকে বলেছিলেন, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাড়ি পৌঁছবেন। কঠিন সময়ে প্রতি মুহূর্তে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন রঞ্জিত। কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর কয়েক স্টেশন আগেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রঞ্জিতের দাদা। কিন্তু সেখানে গিয়ে হাতে পান ভাইয়ের মৃতদেহ। অকাল মৃত মেয়ের শোকের আবহে বাবা রঞ্জিতের মৃতদেহ ফিরছে মাথাভাঙার লতাপাতা গ্রামে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy