Advertisement
E-Paper

রুস্তমদের নিয়েই ঘর করেন রতন

পইপই করে বারণ করেছিলেন পরিচিতরা। কামড়ে দেবে, চোখ খুবলে নেবে বলে ভয়ও দেখিয়েছিলেন। রতন বলে, “একটু কিন্তু কিন্তু ছিল।

স্নেহ: চিলের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

স্নেহ: চিলের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৪
Share
Save

খদ্দের দাঁড়িয়ে দোকানের সামনে। ব্যাগ হাতে রতন ছুটছেন বাজারে। ছাঁট মাংস আনতে হবে। রাজা, রানি আর রুস্তমের সকালের খাবার। বাজার থেকে ফিরে দোকানের ঝাঁপ খুললেন মধ্যবয়সী রতন। বড় ডানা ছটফটিয়ে রাজা, রানি, রুস্তম থার্মোকলের বাক্স থেকে উড়ে বসলো চেয়ারে, টেবিলে, রতনের কাঁধে, মাথায়। হাতের চেটোয় মাংস রেখে বাড়িয়ে দিলেন রতন শীল, বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে মাংসের টুকরো মুখে তুলে নিল একে একে তিনটে আহত চিল।

মাসখানেক ধরে এ ভাবেই দিন শুরু হচ্ছে জলপাইগুড়ির দুই নম্বর ঘুমটির ক্ষৌরকার রতন শীলের। প্রাণী দরদি বলে রতনের পরিচিতি অনেক দিন। কিন্তু আশেপাশের বাসিন্দারা জানালেন, তাই বলে চিল?

পইপই করে বারণ করেছিলেন পরিচিতরা। কামড়ে দেবে, চোখ খুবলে নেবে বলে ভয়ও দেখিয়েছিলেন। রতন বলে, “একটু কিন্তু কিন্তু ছিল। তবে বিদ্যুতের তারে লেগে দোকানের সামনে পড়ে গিয়ে কাতরাচ্ছিল পাখিটা। তুলে নিয়ে জল না খাওয়ালে হয়ত মরেই যেতো।’’ পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ডাক্তারও দেখিয়েছেন তিনি। নার্ভের ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন চিকৎসক। রতন সে সব কিনে খাওয়াতে শুরু করেন। সঙ্গে পথ্য মাংসের ছাঁট। চিলটির নাম রাখেন রুস্তম। মাসখানেক আগে রুস্তমকে উদ্ধারের পরপরই এক সকালে খবর আসে ঝড়ে কদমতলার কাছে গাছ থেকে পড়ে গিয়েছে দুটি ছোট্ট চিল। ভরসা করে ওই দুই চিলকেও নিয়ে আসেন তিনি। ওদের নাম রাখেন রাজা-রানি।

সেলুনে থার্মোকলের বাক্সে এখন তিনটি চিলের আস্তানা। রাতের বেলায় সেখানেই থাকে ওরা। সকালে আগে ওদের খাবার এনে তারপর দোকান খোলেন রতন। তার জন্য দু’একজন খদ্দের হাত ছাড়া হলেও কিছু মনে করেন না।

রতনকে দেখে অনুপ্রাণিত অনেকেই। এলাকার যুবক সুরজিৎ ঘোষ যেমন জানায়, “আমরাও চিলের গায়ে হাত বোলাই। অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য একটা দল গড়েছি। তবে চিলগুলো রতনদাকেই বেশি চেনে।’’ চিকিৎসক জানিয়েছে মাস দুয়েকের মধ্যে ওড়ার ক্ষমতা ফিরে পাবে তিনটে পাখিই। স্বাদ বদলের জন্য সপ্তাহে একদিন মুরগির বদলে পাঁঠার মাংসের ছাট খাওয়ান।

তবে উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণী উদ্যান তথা বেঙ্গল সাফারি পার্কের অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথমত চিল পোষ মানে না। এ ক্ষেত্রে যা শুনলাম তাতে চিলগুলিকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ এবং পথ্য খাওয়াচ্ছেন। খুব ভাল উদ্যোগ।’’ বেঙ্গল সাফারি পার্কে প্রাণীদের হাসপাতাল রয়েছে। প্রয়োজনে পার্ক কর্তৃপক্ষও রতনবাবুকে সহযোগিতা করবেন বলে জানালেন।

সকলের পায়েই একটি করে আঙটি পরানো। রতনই পরিয়েছেন। বললেন, “হয়ত একদিন ওরা উড়ে যাবে। তারপর কে বলে পারে, কোনদিন মনে পড়লে আমার সঙ্গে দেখা করতেও আসতে পারে।" তখন পায়ের আঙটি দেখেই রাজা, রানী রুস্তমকে চিনে নেবেন রতন।

Jalpaiguri Ratan Sil injured hawk Bird lover hawk

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy