Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জেলে থেকেই প্রার্থী সুকুমার

মাস চারেক আগে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। শেষে অবশ্য তিনি আত্মসমর্পণ করেন আদালতে। এখন তিনি জেলবন্দি। সেই বিতর্কিত নেতাকেই এ বারে কোচবিহারে উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করল বিজেপি। তাদের দাবি, সুকুমার লড়াকু নেতা। শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিলে তিলে সংগঠন তৈরি করেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

মাস চারেক আগে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। শেষে অবশ্য তিনি আত্মসমর্পণ করেন আদালতে। এখন তিনি জেলবন্দি। সেই বিতর্কিত নেতাকেই এ বারে কোচবিহারে উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করল বিজেপি। তাদের দাবি, সুকুমার লড়াকু নেতা। শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিলে তিলে সংগঠন তৈরি করেছেন তিনি। তাই তাঁকে হেনস্থা করতেই মিথ্যা চক্রান্ত করে জেলবন্দি। তাঁকে প্রার্থী করাতে বিজেপি কর্মীরা উৎসাহিত হবে। শুধু তাই নয়, সহমর্মিতার ভোটও তিনি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতারা। তৃণমূলের দাবি, এক জন সমাজবিরোধীকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। শুধু খুন নয়, পুণ্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধাবায় বেআইনি মদের কারবারও চালান তিনি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় খোদ পুণ্ডিবাড়িতে এসে সুকুমারবাবুর বিরুদ্ধে সরব হন।

তৃণমূলের ওই কেন্দ্রের প্রার্থী কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি পরিমল বর্মন। তিনি বলেন, “যিনি এখনও খুনের অভিযোগে জেলে রয়েছেন, তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এর পিছনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের হাত রয়েছে। এর থেকে পরিষ্কার কারা এখনও সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। মানুষ এর জবাব দেবে।” ওই কেন্দ্রে জোট প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের নগেন রায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার বলেন, “এই আসনে কে কাকে প্রার্থী করল, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। তবে বিজেপি জেলের বাইরের কাউকে প্রার্থী করলেই ভাল করত। এখন তারা প্রার্থী খুঁজে পায়নি কী আর করা যাবে।” তৃণমূল ও বাম জোট কারও কথাই অবশ্য গুরুত্ব দিতে রাজি নয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তেই প্রার্থী হয়েছেন সুকুমারবাবু। বিজেপি করার জন্য তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপরে যে অত্যাচার হয়েছে, তা এলাকার মানুষ জানেন। চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি এখন জেলে রয়েছেন। তিনি প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় আমার জয় হবে।”

দলীয় সূত্রের খবর, সুকুমার বিজেপির কোচবিহার জেলার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। গত বছরের ২৯ নভেম্বর কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার পুণ্ডিবাড়িতে তৃণমূল কর্মী নারায়ণ মহানায়ককে (৪৫) গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল অভিযোগ তোলে, সুকুমারবাবুর নেতৃত্বে ওই খুন করা হয়। নারায়ণবাবু তৃণমূলের ভাল সংগঠক ছিলেন। সে জন্যই তাঁর উপরে হামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দেন সুকুমারবাবু। পুন্ডিবাড়িতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে সুকুমারবাবুর একটি ধাবা রয়েছে। ঘটনার দিন ওই ধাবাতে হামলা চালায় তৃণমূল কর্মীরা।

বিজেপির অভিযোগ, ধাবা ভাঙচুর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয় সুকুমারবাবুর বাড়িতেও। সেখানে ভাঙচুর চলে। ঘটনার পরেরদিন পুণ্ডিবাড়ি পৌঁছন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বেআইনি ধাবা নিয়ে সরব হন। তা বন্ধ না করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। প্রায় তিন মাস পালিয়ে থাকার পরে চলতি মাসেই আত্মসমর্পণ করেন সুকুমারবাবু। বিচারক তাঁর জেল হেফাজত দেয়। তাঁর প্রার্থী হওয়ার খবরে খুশি হয়েও ভয় পাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর স্ত্রী মায়া দেবী বলেন, “উনি প্রার্থী হয়েছেন জেনে অনেকেই বাড়িতে এসেছেন। এলাকার মানুষেরাও প্রচারে নামবেন বলছেন। আমারাও নামব। আবার ভয় হয় কখন আক্রমণের মুখে পড়ি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cooch behar bjp Candidate bjp contest from prison
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE