স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় ১১ দিন পরেও চার অভিযুক্তের নাগাল পায়নি পুলিশ। বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ এ পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তদন্তভার নিয়েছে বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। তাঁরা ইতিমধ্যেই জেরা করেছেন ধৃত রাজু ঢালি ও তুফান থাপাকে। ধৃতদের মোবাইলের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনের ঘটনার আগে ও পরে তাদের সঙ্গে কার কার কথা হয়েছে, তারা কোথায় কোথায় গিয়েছিল, সে সব খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট এক জনের সঙ্গে দু’জনেরই কথা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে অভিযুক্তদের বয়ানের সাদৃশ্য রয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহের কাজ হয়েছে। সে সব মিলিয়ে দেখার পরে অভিযুক্ত বিডিও প্রশান্ত বর্মণের সঙ্গে ঘটনার কতটা যোগ রয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
গত ২৯ অক্টোবর যাত্রাগাছি এলাকার বাগজোলা খাল সংলগ্ন ঝোপ থেকে স্বপনের দেহ মিলেছিল। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, অপহরণ করে পিটিয়ে মারা হয়েছে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। সেই ঘটনায় নাম জড়ায় ওই বিডিও-র। যদিও তিনি একাধিক বার অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। যা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। প্রভাবশালী বলেই বিডিও-কে গ্রেফতার করা হয়নি, এমন অভিযোগও উঠেছে। যদিও তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করবে। এই ঘটনায় মোট ছ’জন জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। যাদের মধ্যে চার জন এখনও অধরা।
অন্য দিকে, খুনের ঘটনা এবং একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে নাম জড়ানো বিডিও প্রশান্ত বর্মণকে গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লক অফিসে অভিযান করে বিজেপি। এ দিন সকালেই ওই ব্লক অফিসে এসেছিলেন বিডিও। বিজেপি সেখানে মিছিল নিয়ে এলে ব্লক অফিসের সামনেই পুলিশ তাদের ব্যারিকেড বসিয়ে আটকে দেয়। বিজেপি সমর্থকেরা ব্যারিকেডে ধাক্কা মারায় সেটির একাংশ ভেঙে যায়। যদিও বিডিও-র চেম্বারের কাছাকাছি পুলিশ কোনও বিজেপি সমর্থককে পৌঁছতে দেয়নি।
ওই বিক্ষোভে ছিলেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিডিও-র সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরাসরি জানতে চাইতাম। আমি তো এই ব্লকের বিধায়ক, আমাকেও পুলিশ ঢুকতে দিল না। উনি (প্রশান্ত) থাকাকালীন এখানে বালি, গরুর কারবার শুরু হয়েছে। উনি নাকি সোনার কারবারি। ওঁর ঘনিষ্ঠদের ধরা হল, কিন্তু বিডিও-কে কেন ধরা হল না? সিবিআই তদন্ত হোক।”
এ দিন বিডিও বলেন, “যাঁরা চক্রান্ত করছেন, তাঁরা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছেন, সব বাইরে বেরোচ্ছে। আরও বেরোবে। এ ছাড়া, বিচারাধীন বিষয়ে কিছু বলব না।” ধৃতেরা তাঁর ঘনিষ্ঠ কিনা জানতে চাইলে প্রশান্ত বলেন, “আমার ঘনিষ্ঠ সকলেই। সাংবাদিকেরাও আমার ঘনিষ্ঠ। কারণ, আমিও আপনাদের চিনি, আপনারাও প্রশান্ত বর্মণকে চেনেন।” গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ হলে বিডিও-কে দেখা যায়নি। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি ছুটিতে ছিলাম।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)