জাহাঙ্গিরের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
সংসারের হাল ধরতে বাড়তি রোজগারের আশায় দিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে অটো চালাতেন। বুধবার কফিনবন্দি হয়ে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের টেটিয়ায় ফিরল জাহাঙ্গীর আলমের (২৬) দেহ। এ দিন সকালে তাঁর দেহ ফিরতেই পরিজনদের পাশাপাশি এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। গত রবিবার দিল্লির রাস্তায় ছুরিকাহত হয়ে রাতে মারা যান অটোচালক জাহাঙ্গীর। উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম নুরের উদ্যোগে এ দিন সড়কপথে তাঁর দেহ এসে পৌঁছয়। ওই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ।
চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘটনাটি দিল্লিতে ঘটেছে। অভিযুক্তরা গ্রেফতারও হয়েছে। নিহতের পরিজনদের সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’’ সপ্তাহখানেক আগে পুণেয় খুন হয়েছিলেন রতুয়ার চাঁদপুরের ফলের রস বিক্রেতা শেখ সেনাউল। কয়েকমাস আগে দিল্লিতেই খুন হন রামু মহালদার নামে হরিশ্চন্দ্রপুরের এক নির্মাণ শ্রমিক। কাজে গিয়ে একের পর এক খুনের ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
নিহত জাহাঙ্গীরের পরিজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লিতে জাকিরনগর এলাকায় থাকতেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে অটো চালাচ্ছিলেন। সম্প্রতি ইদে বাড়ি এসে গত মাসের শেষ সপ্তাহেই দিল্লি ফিরে যান। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী ছাড়াও নাবালক চার সম্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বয়স মাত্র ছয়। তাঁর আয়েই সংসার চলত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধেয় ছুরিকাহত অবস্থায় অটো চালিয়ে কনট প্লেস থানায় হাজির হন জাহাঙ্গীর। ভাড়া নিয়ে বিবাদের জেরে চার যাত্রী তাঁর বুকে ছুরি মারে বলে পুলিশকে জানান তিনি। তিনি এও জানান, ওই যুবকেরা তাঁকে এলোপাথাড়ি ঘোরানোয় রাতের বাড়তি ভাড়া হিসেবে ২০ টাকা চেয়েছিলেন তিনি। তা নিয়ে বিবাদের জেরে তাঁকে কুপিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। দিল্লি পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। গভীর রাতে মারা যান তিনি।
নিহতের প্রৌঢ় বাবা আতাউর রহমানও দিনমজুর। ছেলের দেহ ফেরানোর আর্জি নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলমের দ্বারস্থ হন তিনি। বিধায়ক বলেন, ‘‘সাংসদ মৌসমকে বিষয়টি জানাই। তাঁর দিল্লির দফতর থেকে জাহাঙ্গীরের দেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’’
ঘটনার জেরে শোকে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী মাহমুদা খাতুন। বাবা আতাউর বলেন, ‘‘ছেলেটার কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। শুধু সংসারের কথাই ভাবত। ওকে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy