Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আক্রান্ত বিজেপি, অভিযুক্ত তৃণমূল

ঠিক হয়েছিল বেলা ১২ টায় বিজেপির প্রতিনিধি দল যাবে পুন্ডিবাড়িতে। আগাম পুলিশকে সে কথা জানিয়েও দেন বিজেপি নেতৃত্ব। ঠিক ওই সময়েই কালো পতাকা নিয়ে মিছিল বের করে তৃণমূল। উত্তেজনা থাকলেও পুলিশ সে ভাবে কোথাও ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিজেপি নেতাদের উপরে হামলার আগে।— নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি নেতাদের উপরে হামলার আগে।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

ঠিক হয়েছিল বেলা ১২ টায় বিজেপির প্রতিনিধি দল যাবে পুন্ডিবাড়িতে। আগাম পুলিশকে সে কথা জানিয়েও দেন বিজেপি নেতৃত্ব। ঠিক ওই সময়েই কালো পতাকা নিয়ে মিছিল বের করে তৃণমূল। উত্তেজনা থাকলেও পুলিশ সে ভাবে কোথাও ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেলা ১ টা নাগাদ বিজেপির প্রতিনিধি দল যখন পুন্ডিবাড়ি মোড়ের কাছে পৌঁছয়, তখন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে গোটা এলাকা। অভিযোগ, লাঠি, লোহার রড, নিয়ে বিজেপির প্রতিনিধি দলের উপরে হামলে পড়ে শাসক দলের কর্মীরা। ছোড়া হয় ইট ও পাথর। হাত জোড় করেও রক্ষে পায়নি বিজেপি নেতা-নেত্রীরা। মারধর চলে প্রায় পনেরো মিনিট ধরে। পরে পুলিশ পৌঁছে শাসক দলের কর্মীদের সরিয়ে দেয়। ততক্ষণে রক্তাক্ত হয়েছে বিজেপির দুই মহিলা নেত্রী সহ পাঁচজন। কেড়ে নেওয়া হয়েছে কারও গলার চেন, কারও মোবাইল। পুলিশ সূত্রের খবর, জখম কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন, বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি মালতী রাভা রায়, জেলা সম্পাদিকা গায়ত্রী কর, জেলা সম্পাদক অজিত রায়, যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক শীতল দাস, কর্মী শরদবিন্দু বসু। মালতী দেবী বলেন, “ওদের কাছে হাত জড়ো করে প্রাণভিক্ষা চেয়েছি। কোনও কথাই শুনছিল না। লোহার রড ও ইট দিয়ে আমাকে আঘাত করা হয়। আমার থুতনি ও হাতে আঘাত লেগেছে। ভয়ে মাথা নিচু করে গাড়ির ভিতরে লুকনোর চেষ্টা করি।”

আক্রান্ত বিজেপি নেতা-নেত্রীরা।— নিজস্ব চিত্র।

ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুকমদার, সহ সভাপতি বাচ্চা আলম। জয়প্রকাশবাবু বলেন, “শাসক দলের কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় আমাদের উপরে হামলা চালায়। আমরা গাড়িচালক পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। একটি গাড়ি আটকে রেখে আমাদের মহিলা নেত্রী সহ ৫ জনকে ব্যাপক মারধর করা হয়।” তাঁর অভিযোগ, তাঁদের নেতা-নেত্রীদের পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয় শাসক দলের কর্মীরা। জয়প্রকাশবাবুর অভিযোগ, তাঁদের ওই কর্মসূচির কথা আগাম পুলিশ সুপার ও আইসিকে জানানো হয়েছিল। তার পরেও কোনও পুলিশি নিরাপত্তা সেখানে ছিলেন না। গাড়ি ভাঙচুরের সময় আইসি অশোক মিশ্র সেখানে পৌঁছলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “পুলিশ পুন্ডিবাড়িতে ছিল। কিছুটা আগে গণ্ডগোল হয়। পুলিশ গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দিন কয়েক আগে আমাদের কর্মীদের বাজারে গুলি করে খুন করে বিজেপি। তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভ ছিল। এদিন ওই দুষ্কৃতীদের অনেকেই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ওই এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করে। তা দেখে এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে শুনেছি। আমাদের করমীরা কোনও হামলা করেনি। সংহতি দিবস আমাদের একটা মিছিল ছিল পুন্ডিবাড়িতে। শান্তিপূর্ণ ভাবে ওই মিছিল হয়।”

পুলিশ সূত্রের খবর, গত রবিবার রাত ৮ টা নাগাদ পুন্ডিবাড়ি বাজারে তৃণমূল কর্মী নারায়ণ মহানায়ককে গুলি করে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক সুকুমার রায়ের নেতৃত্বে ওই খুন করা হয় বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। ওই ঘটনার পরে সুকুমারবাবুর হোটেল, বিজেপি পার্টি অফিস ও বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে শাসক দলের কর্মীরা হামলা করে বলে অভিযোগ ওঠে। গত সোমবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পুন্ডিবাড়ি যান। তিনিও বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন।

বিজেপি অবশ্য দাবি করে, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নারায়ণবাবু খুন হন। নজর ঘোরাতে শাসক দলের কর্মীরা মিথ্যে অভিযোগ তুলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করে। ওই আক্রান্ত কর্মীদের দেখতেই এদিন জয়প্রকাশবাবুর নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা ওই এলাকায় রওনা দেন। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁদের সঙ্গে চারটি ছোট গাড়ি ও একটি বাস ছিল। ওই গাড়িগুলি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছতেই তাড়া করে শাসক দলের কর্মীরা। প্রথমেই ছিল জয়প্রকাশবাবুর গাড়ি। তাঁর গাড়ি সহ তিনটি গাড়ি কোনওরকম ভাবে ঘুরিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান চালকেরা। বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, বাসটিতে যে তাঁদের কর্মীরা ছিলেন তা বুঝতে পারেনি শাসক দলের কর্মীরা। একটি ছোট গাড়ি আটক করে ভাঙচুর করেন শাসক দলের কর্মীরা। ওই গাড়িতেই ছিলেন মালতী দেবী সহ বিজেপির পাঁচ নেতা-নেত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE