Advertisement
E-Paper

গ্যারাজে কুপিয়ে খুন শিলিগুড়িতে

খাস শহরের মধ্যেই কুপিয়ে খুন করা হল প্রাক্তন এক কাউন্সিলরের স্বামীকে। শনিবার সকালে শিলিগুড়ির সেবক রোডে মনোজ শর্মা (৫৪) নামে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁরই গ্যারাজ থেকে। দেহের পাশেই পড়েছিল একটি ভোজালিও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
মৃতকে উদ্ধারের পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র

মৃতকে উদ্ধারের পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র

খাস শহরের মধ্যেই কুপিয়ে খুন করা হল প্রাক্তন এক কাউন্সিলরের স্বামীকে। শনিবার সকালে শিলিগুড়ির সেবক রোডে মনোজ শর্মা (৫৪) নামে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁরই গ্যারাজ থেকে। দেহের পাশেই পড়েছিল একটি ভোজালিও।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ভোজালি দিয়ে ঘাড়ে এবং মাথার পেছন দিকে কোপ মারাতেই মনোজবাবুর মৃত্যু হয়েছে। মনোজবাবুর স্ত্রী শর্মিলা দেবী ওই এলাকারই প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর। শর্মিলা দেবী সহ পরিবারের অভিযোগের তির গ্যারেজে সদ্য নিযুক্ত চৌকিদারের দিকে। মাত্র ১২ দিন আগে ডুয়ার্সের বাসিন্দা এক যুবককে গ্যারেজের চৌকিদারির কাজে মনোজবাবু নিযুক্ত করেন। তারপর থেকে গ্যারেজেই বেশি সময় কাটত মনোজবাবুর। প্রতি রাতে সেখানে নেশার আসর বসত বলেও অভিযোগ। খুনের রাতেও গ্যারাজে মদের আসর বসেছিল বলে পুলিশের অনুমান। এ দিন সকাল থেকে ওই চৌকিদার যুবক উধাও। মনোজবাবুকে খুন করে নগদ টাকা, সোনার অলঙ্কার, স্কুটি নিয়ে যুবক পালিয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ওই যুবকের মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান এ দিন সকাল পর্যন্ত বানারহাট এলাকায় দেখিয়েছে। তার পর থেকে মোবাইল বন্ধ করা রয়েছে।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে অনেক কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত অভিযুক্তকে ধরা সম্ভব হবে।’’

মনোজ শর্মা।

এ দিন সকালে গ্যারাজের ঘর থেকে চারটি গ্লাস, ভুজিয়া, চানাচুর পেয়েছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে গ্যারাজে মদের আসরে অন্তত চার জন ছিল। মনোজবাবুর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি আসরে ছিল সন্দেহে তাঁকে জেরা শুরু করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে এলাকার এক গাড়ি চালককেও। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জেনেছে, গত শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে ভাত খেয়ে মনোজবাবু গ্যারাজে চলে যান। সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ এলাকার এক ব্যক্তিকে দিয়ে জলের বোতল কিনে আনান। গ্যারাজ থেকে তাঁকে বের হতে দেখা যায়নি বলে আশেপাশের দোকান মালিক, ব্যবসায়ীদের দাবি। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা মোবাইলে ফোন করলেও মনোজবাবু ফোন তোলেননি। রাত বারোটা নাগাদ তাঁর মেয়ে গ্যারাজে খোঁজ নিতে গেলে বাইরে থেকে দরজা তালা বন্ধ দেখেন।

সে সময়ে মনোজবাবুর মোবাইলে যোগাযোগ করলে চৌকিদার ফোন তোলে এবং দাবি করে, ‘মনোজবাবুর অতিরিক্ত মদ্যপান করায় কথা বলতে পারবে না।’ তাঁরা জলপাইগুড়িতে আছেন বলেও দাবি করে ওই চৌকিদার। কিছু পরে মনোজবাবুর মেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এ দিন সকালে অন্য চাবি দিয়ে গ্যারাজের দরজা খুললে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের সন্দেহ, রাত বারোটার আগেই মনোজবাবুকে খুন করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই প্রণামী মন্দির রোডে মনোজবাবুর গ্যারাজ রয়েছে। প্রাক্তন কাউন্সিলরের স্বামী ও বিত্তশালী হওয়াতে এলাকাতে মনোজবাবুর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি গ্যারাজে এক নেপালিভাষী যুবককে চৌকিদারের কাজে নিয়োগ করা নিয়ে তাঁর পরিবারেও অশান্তি হয়। ওই যুবক গ্যারাজের ঘরেই থাকত। সেখানেই রান্না করে খেত। যথাযথ ঠিকানা, পরিচয় না জেনেই যুবককে কেন নিয়োগ করা হল, তা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা প্রশ্ন ওঠে। মনোজবাবু এখন বেশিরভাগ সময়ে গ্যারাজেই কাটাতেন বলে পরিবারের দাবি। গ্যারাজেই নেশার আসর বসত বলে অভিযোগ।

মনোজবাবুর স্ত্রী শর্মিলাদেবীর অভিযোগ, ‘‘ওই চৌকিদার যুবক নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আমার স্বামীকে জড়িয়ে দিয়েছিল। ওকে একটা মোহতে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তা নিয়ে কিছু বললেই আমাদের ওপর রাগারাগি করত।’’ তাঁদের সন্দেহ ওই যুবকের হাতেই খুন হয়েছেন মনোজবাবু।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, টাকার লোভেই মনোজবাবুকে খুন করা হয়েছে। যদিও, পুলিশ অবশ্য এত সহজে এই তত্ত্ব মানছে না। ওই যুবককে কেউ ইচ্ছে করে মনোজবাবুর গ্যারাজে কাজে পাঠিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy