বিএসএফের উত্তরবঙ্গের ডিআইজি ডি হাউকিপ বলেন, “ফাঁসিদেওয়া এলাকার মহানন্দা নদীর জন্য অনেকটা এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। বালি পাথর তুলতে ওপারের একদল লোক প্রায়শই নদীতে নেমে পড়ে। তাদের তাড়া করে ভাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনই একটি ঘটনায় গত সপ্তাহে একটি ম্যানপ্যাক নিয়ে পালিয়েছিল একদল লোক। পরে অবশ্য বিজেবি’র সাহায্যে তা মিলেছে। নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।”
বিএসএফ সূত্রের খবর, ফাঁসিদেওয়া ব্লকের লালদাস জোত থেকে মুড়িখাওয়া এলাকা অবধি প্রায় ২৪ কিলোমিটার বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। গোটা এলাকায় চটহাট, ফাঁসিদেওয়া এবং জালাস নিজামতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় রয়েছে। এরমধ্যে বিএসএফের লালদাস, বানেশ্বর, ফাঁসিদেওয়া, কালামগছ এবং মুড়িখাওয়াতে বিএসএফের সীমান্ত চৌকি রয়েছে। সীমান্তের লালদাস থেকে ধনিয়ামোড় অবধি কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। পরবর্তী বন্দরগছর অবধি কোনও বেড়া নেই। মহানন্দা নদী এবং এপারের গ্রামের জমির সমস্যার জন্য কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি। এর সুযোগেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা বরবারই ফাঁসিদেওয়া সীমান্তে সক্রিয় বলে অভিযোগ।
বর্ষা ছাড়াও সারা বছর শুকিয়ে কার্যত কাঠ হয়ে থাকে মহানন্দা নদী। কাঁটাতারের বেড়া। কিছু অংশ শুধু রয়েছে নদী বাঁধ আর মাটিতে বিছানো কাঁটাতার। নদীর মধ্যে থাকা সীমান্ত স্তম্ভের চারদিকের এলাকায় বালি, পাথরের স্তূপ। সাত সকাল থেকেই একদল লোক নদীতে নেমে বালি তুলে নিয়ে অবাধেই চলে যায় ওপারে। ওইদিকে বাঁধের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রাক, ছোট গাড়িও। দিনভর হয়ে চলেছে ওই কাজ।
নজরে সীমান্ত
• ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটা বড় অংশে নেই কোনও বেড়া।
• নদীর মধ্যে থাকা সীমান্ত এলাকায় অবাধেই নেমে চলে বালি তোলা।
• খোলা সীমান্তের সুযোগ নিয়ে সন্ধের পরেও দুষ্কৃতীরা ঢুকছে বলে অভিযোগ।
• ফাঁসিদেওয়া থানায় বিএসএফের অভিযোগের পরেই বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা।
আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের স্তম্ভের এ পারে আসার কথা না থাকলেও তা অবাধেই চলে বলে অভিযোগ। এমন ভাবেই এক বিএসএফকে জওয়ান দুষ্কৃতীদের তাড়া করলে তাঁকে পাল্টা ঢিল ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। তিনি অসতর্ক হয়ে দৌড়তেই তাঁর ম্যানপ্যাকটি মাটিতে পড়ে যায়। বাকিরা এগিয়ে আসার আগেই তা নিয়ে পালায় একদল ‘ওপারে’র বাসিন্দা।
সীমান্তের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কখনও সন্ধ্যার পর সন্দেহভাজনেরা এমনই খোলা সীমান্তের সুযোগে এ পারে ঢোকে বলে একাধিকবার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে খবরও পৌঁছেছে। ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্ত ছাড়াও অন্যপাশে উত্তর দিনাজপুর ও বিহার। এতে মজা নদী পার হয়ে সহজেই এপারে এসে আশ্রয় নিয়ে বিহার বা উত্তর দিনাজপুরে ঢোকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন না পুলিশ ও বিএসএফের অফিসারেরা। তাঁরা জানান, বিশেষ শীতের রাতে এই প্রবণতা বেশি থাকে। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকার পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিএসএফের নজরদারি ছাড়াও সীমান্তের গ্রামীণ রাস্তায় একজন সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে কনস্টেবল, সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারির কাজে নামানো হয়েছে।
গত বছরে একাধিকবার সন্দেহভাজন ধরা পড়া, শূন্যে গুলি করে তাড়ানো, মন্দিরে গণপ্রহারের ঘটনাও ঘটেছে। সঙ্গে চলে গরু পাচারও। বিশেষ করে ধনিয়মোড়, মুন্ডাবস্তি এবং বন্দরগছ এলাকার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বীরূপাক্ষ মিত্র বলেন, “বিএসএফের ম্যানপ্যাক নিয়ে পালানোর ঘটনাটি শুনেছি। পুলিশ এবং বিএসএফকে সতর্ক করা হয়েছে। খুব দ্রুত সীমান্ত নিয়ে আরেক দফায় বৈঠকে বসা হবে।”