নিজের ঘরের সামনে ফেলানি। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
ছোটবেলায় নাম রাখা হয়েছিল ফেলানি। কে রেখেছিলেন, তা আজ আর মনে নেই। তবে সেই নাম আর জীবন এখন একাকার। বাবা, মা মারা গিয়েছেন বহু বছর আগে। ভাইয়েরাও ফেলে চলে গিয়েছেন অনেকদিন হল। বিয়ে না করায় স্বামী, সন্তানও নেই। দৃষ্টিহীন ফেলানির এখন জীবন চলে আইসিডিএসের বেঁচে যাওয়া খাবারে। প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে।
বুনিয়াদপুর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের থিঙ্গুরের বাসিন্দা ফেলানি সরকার (৬১)। পরিবার ছাড়া এই অন্ধ বৃদ্ধার জীবনে সঙ্গী বলতে লাঠি। ভরসাও। ঘর মানে, কোনও মতে টিকে থাকা ভাঙা টিনের ঝুপড়ি। লাঠি ঠুকে ঠুকে চলাফেরা করেন। তা তো করতেই হয়! বাড়ি থেকে না বের হলে খাবার পাবেন কোথায়?
খাবারের খোঁজে, এলাকার শেষপ্রান্তে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে হত্যে দিয়ে বসে থাকেন। কেন্দ্রের কর্মীদের ‘দয়া’ হলে খাবার জুটে যায়। প্রতিদিন যে খাবার মেলে তাও না। তাই যেদিন খাবার পান সেটা দিয়েই দুই দিন চালিয়ে নেন। যে দিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে কিছু মেলে না, সেদিন প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার জোগাড় করতে হয়। সরকারি অনেক প্রকল্প থাকলেও সে সবের সুবিধে কিছুই তিনি পাননি— এমনই অভিযোগ ফেলানির।
ফেলানি বললেন, ‘‘আমায় দেখার তো কেউ নেই! নিজেও কিছু চোখে দেখি না। ওই সরকারি বাড়ি (অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র) থেকে কোনও দিন খাবার দেয়। মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীরাও খাবার দেয়। যেদিন দেয় না, সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়।’’
প্রতিবেশীরা জানালেন, ফেলানির জন্য আবাস যোজনার ঘর আসেনি। তাই ভাঙা ঘরেই থাকছেন তিনি। নির্মল বাংলা প্রকল্পে যে শৌচালয় দেওয়া হয় তাও পাননি তিনি। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা চাঁদা তুলে শৌচালয়ের জন্য শুধু ছাদেক ‘শিট’টাই কিনে দিতে পেরেছেন। এখনও শৌচালয়ের দেওয়াল ওঠেনি। বাধ্য হয়ে দৃষ্টিহীন এই বৃদ্ধাকে মাঠেই যেতে হয় শৌচকর্ম করতে।
এলাকার বাসিন্দা স্বাধীন সরকার বলেন, ‘‘শীতের সময়ে আমরা কম্বল, কাপড় দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন থেকে কিছুই পাননি ওই বৃদ্ধা। খুব কষ্টে থাকেন উনি। আমরা সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করি।’’
সোমবার, বুনিয়াদপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘কলকাতা রয়েছি। ফিরে এসে ব্যবস্থা নেব।’’
গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক পি প্রমোথ বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখে, ওই বৃদ্ধার বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy