Advertisement
১০ মে ২০২৪
Phansidewa

প্রাণনাশের ‘হুমকি’র কথা থানায় জানাতে এসে বেধড়ক ‘মার’ খেতে হল ব্যবসায়ীকে!

কাজ নিয়ে বচসার জেরে হাতাহাতি হয় রহমান এবং রকিবুলের মধ্যে। তার পরেই রকিবুল প্রাণনাশের হুমকি দেন রহমানকে। সেই অভিযোগ থানায় জানাতে গিয়েই ঘটল যত কাণ্ড!

মহম্মদ রহমান (বাঁ দিকে) এবং অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টর শঙ্কর রায় (ডান দিকে)।

মহম্মদ রহমান (বাঁ দিকে) এবং অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টর শঙ্কর রায় (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:০৯
Share: Save:

কাজ নিয়ে বচসার জেরে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী। থানায় সেই অভিযোগ লেখাতে এসে কপালে জুটল বেধড়ক ‘মার’। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসি দেওয়া থানায়। ঘটনার পর থেকেই ‘বেপাত্তা’ অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক।

মহম্মদ রহমান ফাঁসি দেওয়া ব্লকের ধামনাগছ এলাকার বাসিন্দা। পেশায় লেপ-কম্বল, শীতবস্ত্র তৈরির কারিগর তিনি। প্রতি বছরই গ্রামে ঘুরে ঘুরে লেপ-কম্বল তৈরি করেন। গত বছর এলাকারই বাসিন্দা মহম্মদ রকিবুলের বাড়িতে এ রকমই একটি কাজ করেছিলেন। অভিযোগ, বুধবার সকালে নিজের বাইকে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে পাকড়াও করে রকিবুল। রকিবুলের দাবি, গত বারের বানিয়ে দেওয়া তোষকে কোনও খামতি রয়ে গিয়েছিল। তাই এ বছর রহমানকে বিনাখরচায় নতুন তোষক বানিয়ে দিতে হবে। এই নিয়ে বচসা বাধে দু’জনের মধ্যে। রহমানের অভিযোগ, রকিবুল তাঁর কাছ থেকে টাকাপয়াসা, বাইক সব কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করে। পরে তাঁর গলায় ছুরি ধরে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। সেখান থেকে কোনও মতে পালিয়ে রহমান ফাঁসি দেওয়া থানায় অভিযোগ জানাতে যান রহমান। তার পরেই আর এক কাণ্ড!

রহমানের অভিযোগ, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ থানায় অভিযোগ জমা নেওয়ার পর পুলিশ তাঁকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে রকিবুলের সঙ্গে কথা বলে দু’জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়৷ এর পরেই রহমানের উপর চড়াও হয় পুলিশ। তাঁকে মারধর করতে শুরু করে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন এবং এলাকাবাসী থানার সামনে জড়ো হতে শুরু করে। এর পরেই পুলিশ রহমানকে ছেড়ে দেয়৷ কিন্তু সাদা কাগজে দু’জায়গায় সই করিয়ে নেওয়া হয় বলে রহমানের অভিযোগ। তাঁৱ আরও অভিযোগ, পুলিশ নাকি তাঁকে হুমকি দিয়েছে বাইরে মুখ না খোলার জন্য। বাইক-সহ অন্যান্য সামগ্রী ফিরিয়ে দিলেও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলেও দাবি তাঁর।

অন্য দিকে, রকিবুলকেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের আচরণে স্তম্ভিত রহমান অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে ঠিক করেন। থানা থেকে বার করে তাঁকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারে লোকজনেরা। রহমানের স্ত্রী সাজদা খাতুন জানান, “মানুষটাকে মেরে শেষ করে দিয়েছে। আমরা খবর পেয়ে থানার সামনে জড়ো না হলে হয়তো তাঁকে ছাড়তই না। আমরা এর বিচার চাই।”

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য পলি সাহা জানান, “আমরা কোনও সমস্যা হলে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাইতে যাই। কিন্তু পুলিশের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। ওঁর শরীরে দাগ হয়ে গিয়েছে। কে ওঁকে মারার অনুমতি দিল! আমি তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”

অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর নাম শঙ্কর রায়। তিনি ফাঁসিদেওয়া থানার সাব ইনস্পেক্টর। এই ঘটনার পর থেকেই তিনি বেপাত্তা বলে রহমানের অভিযোগ। মারধরের ঘটনায় প্রশ্ন করা হলে ডিএসপি অচিন্ত্য গুপ্ত বলেন, “অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের একটা বিষয় ছিল বলে জানি। তবে মারধরের বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমি জানি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Phansidewa police man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE