Advertisement
E-Paper

পিয়ারপুরে স্কুলে আশ্রয় নেয় গরু

এখানেই শেষ নয়, বিকেল হলে স্কুলের বারান্দা এলাকার বাসিন্দাদের গোরু-ছাগল রাখার আস্তানা। বর্ষাকালে তো শুধু বারান্দাই নয়, স্কুলের ক্লাসরুমও নাকি গবাদিপশুদের আস্তানা হয়ে দাঁড়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২০
বেহাল: স্কুলের বেড়ায় মেলা হয়েছে পোশাক। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: স্কুলের বেড়ায় মেলা হয়েছে পোশাক। নিজস্ব চিত্র

সীমানা প্রাচীর নেই। স্কুলের সামনের অংশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেটাও ভাঙাচোরা। আর স্কুলের সেই বাঁশের বেড়া এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাপড় শুকোনোর জায়গা। সকাল হলেই আশেপাশের বাসিন্দারা সেখানেই জামাকাপড় মেলতে শুরু করেন।

এখানেই শেষ নয়, বিকেল হলে স্কুলের বারান্দা এলাকার বাসিন্দাদের গোরু-ছাগল রাখার আস্তানা। বর্ষাকালে তো শুধু বারান্দাই নয়, স্কুলের ক্লাসরুমও নাকি গবাদিপশুদের আস্তানা হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল চত্বরও ছেয়ে যায় আবর্জনায়। স্কুলের ৬০ বছরের ইতিহাসে গঙ্গা ভাঙনের জেরে স্কুলের স্থান বদলেছে ছ’বার। এখন যে এলাকায় স্কুল ভবন রয়েছে সেখানে ভাঙনের সমস্যা নেই। কিন্তু স্থানীয় সমস্যাগুলিতে জেরবার কালিয়াচক ২ ব্লকের পিয়ারপুর ম্যানেজড প্রাইমারি স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের নিবিড় সংযোগ গড়তে জেলাজুড়ে যখন মিশন উত্কর্ষ কর্মসূচি চলছে সেখানে এই স্কুলের এ হেন হাল নিয়ে বিস্মিত প্রশাসনের কর্তারা।

গঙ্গা নদী যখন উদুয়ানালা নামে কালিয়াচক দিয়ে বইত সেই সময় অর্থাৎ ১৯৫৭ সালে পিয়ারপুর গ্রামে স্থাপিত হয়েছিল পিয়ারপুর ম্যানেজড প্রাইমারি স্কুলটি। সেই পিয়ারপুর গ্রাম এখন গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা চর। স্কুল ও স্থানীয় গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬০ সালে প্রথম গঙ্গার কোপে পড়ে স্কুল ভবন। বাধ্য হয়ে স্কুল সরাতে হয় ছাতিয়ানতলায়। সেখানে দশ বছর চলার পর ফের স্কুলকে গ্রাস করে গঙ্গা। ১৯৭১ সালে পঞ্চানন্দপুর পঞ্চায়েতের ছোক্কুটোলায় উঠে আসে স্কুল। প্রায় ৩০ বছর সেখানে চললে ফের গঙ্গার গ্রাস করে স্কুলকে। এরপর ২০০৩ সালে সকুল্লাপুরের সাধুর আখড়া, ২০০৪ সালে আকন্দবাড়িয়া মোড় হয়ে শেষপর্যন্ত ২০০৬ সাল থেকে বাঙিটোলার ফিল্ড কলোনি মাঠে চলছে এই পিয়ারপুর প্রাইমারি স্কুলটি।

পিয়ারপুর গ্রাম থেকে উঠে গেলেও সেই নামেই স্কুল চলছে এখনও। সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থে তৈরি হয়েছে দ্বিতল ভবন। ২০৫ জন পড়ুয়ার জন্য একজন পার্শ্বশিক্ষক সহ মোট ৯ জন শিক্ষকও রয়েছেন। ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েরাই এই স্কুলে পড়ে। শিক্ষকরা জানালেন, গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা মিটলেও স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা দফতর থেকে প্রশাসন সর্বত্র জানিয়েও সমস্যা মেটেনি। তাঁরা নিজেরাই খরচ করে স্কুলের সামনের অংশে প্রতি বছর বাঁশের বেড়া দেন। কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই। সেই বেড়া বাসিন্দাদের কাপড় শুকোনোর জায়গা, স্কুলের বারান্দা গবাদিপশুদের আস্তানা। প্রধান শিক্ষক সুশীলকুমার চৌধুরী বা সহশিক্ষক শাহজাহান আলি, হানিফ শেখরা বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের ডেকে স্কুলে মিটিং করে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ সব বন্ধ করার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। বারবার সচেতন করেও আমরা হতাশ।’’ গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটির সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভাঙন পীড়িতদের নিয়েই আমাদের কাজ। আমরা সাংগঠনিকভাবে এলাকার বাসিন্দাদের বোঝাবো যে স্কুলটি তাঁদেরও এবং স্কুলকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও তাঁদের।’’ পঞ্চায়েত প্রধান চন্দনা মণ্ডল অবশ্য জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতির কথা তাঁর জানা নেই।

এ দিকে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেমনই কয়েকজন গ্রামবাসী অবশ্য বলেন, ‘‘স্কুল সাফ রাখার দায়িত্ব শিক্ষকদেরও, তারা সেই কাজটি করেন না।’’ শিক্ষার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘ স্কুলটি পরিদর্শনে যাব। বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলব।’’

Cattle Maldah School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy