Advertisement
E-Paper

মগডালে চিতাবাঘ, ধূপগুড়িতে হইচই

ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধোওয়ারও সময় নেই। সকলেই ছুটছেন। মগডালে যে চিতাবাঘ! সেই চিতাবাঘ যত ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছে, জনতা ততই উল্লাসে ফেটে পড়েছে। প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক ধরে এই কাণ্ড চলার পরে অবশেষে পূর্ণবয়স্ক ওই চিতাবাঘটিকে ঘুম পাড়ানো গুলি ছুড়ে কাবু করা হয়েছে। আপাতত সে নিরাপদ আশ্রয়ে।

রাজকুমার মোদক

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৫
শহরে চিতাবাঘ! বুধবার সকালে ধূপগুড়ি স্টেশনের কাছে একটি মেহগনি গাছের মাথায় চড়ে বসে থাকতে দেখা যায় এই পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘটিকে। ঘণ্টা পাঁচেকের চেষ্টায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ফালাকাটার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

শহরে চিতাবাঘ! বুধবার সকালে ধূপগুড়ি স্টেশনের কাছে একটি মেহগনি গাছের মাথায় চড়ে বসে থাকতে দেখা যায় এই পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘটিকে। ঘণ্টা পাঁচেকের চেষ্টায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ফালাকাটার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধোওয়ারও সময় নেই। সকলেই ছুটছেন। মগডালে যে চিতাবাঘ! সেই চিতাবাঘ যত ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছে, জনতা ততই উল্লাসে ফেটে পড়েছে। প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক ধরে এই কাণ্ড চলার পরে অবশেষে পূর্ণবয়স্ক ওই চিতাবাঘটিকে ঘুম পাড়ানো গুলি ছুড়ে কাবু করা হয়েছে। আপাতত সে নিরাপদ আশ্রয়ে।

বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ ধূপগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন একটি কদম গাছের ১৫ ফুট উঁচুতে প্রথম বাঘটিকে বসে থাকতে দেখা যায়। কয়েক মিনিট পরেই বাঘটি ৪০ মিটার দূরে একটি মেহগনি গাছের প্রায় ৫০ ফুট উঁচুর একটি মগডালে উঠে পড়ে। ধূপগুড়ির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের যে বাড়ির বাইরের গাছে বাঘটি বসে ছিল সেই বাড়ির মালিক তবৃজ আলম বলেন, “তখনও ভালো করে আলো ফোটেনি। ভোর ৫ টা হবে। হঠাৎ দেখি কলপাড় থেকে ১৫ ফুট দূরে কদম গাছে চিতাবাঘটি বসে আছে। ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে সবাইকে ডেকে সাবধান করি। কয়েক মিনিট পরেই দেখি চিতাবাঘটি কিছুটা দূরে মেহগনি গাছে উঠছে।”

খবর পেয়ে ছুটে আসে বিন্নাগুড়ি ওয়াল্ড লাইফ স্কোয়াড, মালবাজারের বনকর্মিরা। জলপাইগুড়ি থেকে আসে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ায় বিশেষজ্ঞেরা। আসে ধূপগুড়ি থানার পুলিশও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন জলপাইগুড়ির বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও উমারানি। আসেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ সীমা চৌধুরী, ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরূপ দে। কয়েক হাজার বাসিন্দা গাছের চার পাশে ভিড় করে থাকায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার সাহস দেখাননি বনকর্মিরা। পুলিশ ও বনকর্মিদের শাসানি–ধমকানিতে আমল না দিয়ে ভিড়ের মধ্যে কিছু বাসিন্দা মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

ভিড় সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত ডাকতে হয় ফালাকাটার সসস্ত্র সীমা বলের জওয়ানদের। জওয়ানরা ঘটনাস্থলে এসে লাঠি চালিয়ে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়ার পরে শুরু হয় বাঘকে কাবু করার জন্য ঘুমপাড়ানি গুলি করার প্রস্তুতি। তৈরি রাখা হয় ধূপগুড়ির দমকল কর্মিদেরও।

অবশেষে চার জন বনকর্মি লোহার তৈরি খাঁচার ভিতর থেকে বাঘটিকে গুলি করতে সমর্থ হয়। গুলি খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে গাছের উপরেই ঘুমিয়ে পড়ে বাঘটি। বাঘটি যাতে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রায় ৫০ ফুট উপর থেকে মাটিতে পড়ে না যায়, তার জন্য বনকর্মিরা গাছের চার দিকে জাল বিছিয়ে রাখেন। চিতাবাঘটি কিছু ক্ষণ পরে প্রথমে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামার চেষ্টা করে। কিছুটা নামার পর প্রায় ২৫ ফুট উপরে থাকার সময় শরীর অবশ হয়ে পড়ে। তখন গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যায় বাঘটি। যেখানে সে পড়ে সেখানে অবশ্য জাল ছিল না।

তবে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বনকর্মিরা বাঘটিকে তুলে প্রথমে বিন্নাগুড়ি ওয়াল্ড লাইফ স্কোয়াডে পরে ফালাকাটার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারে। চিতাবাঘটিকে পুরোপুরি সুস্থ করে জঙ্গলে ছাড়া হবে বলে সীমাদেবী জানান।

গত ১৭ ডিসেম্বর ধূপগুড়ি শহরে দাপিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে ৩ টি হাতি। এ দিন বাসিন্দাদের বক্তব্য, বাঘটি যদি গাছ থেকে নেমে পড়ত, তা হলে লোকজনের ক্ষতি হতে পারত। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরূপ দে বলেন, ‘‘চিতাবাঘটি কারও ক্ষতি করার আগেই বনকর্মিরা ঘুমপাড়ানি গুলি করে বাঘটিকে নিয়ে যাওয়ায় হাফ ছেড়ে বেঁচেছি।”

Cheetah Dhupguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy