প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশের অন্দরের গোষ্ঠী-প্রসঙ্গ তুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেপুটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক আধিকারিককে কেন কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, সে প্রসঙ্গ তুলে পুলিশের অন্দরের গোষ্ঠী-সমীকরণের জন্য, তেমন হচ্ছে কি না তিনি জানতে চান কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের কাছে। বুধবার শিলিগুড়ির উপকন্ঠে উত্তরকন্যায়উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকে নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতকশঙ্কর ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোচবিহারে ডিএসপি (সদর) চন্দনবাবু কি এসেছেন মিটিংয়ে?’’ কোচবিহারের এসপি জানান, তিনি বৈঠকে নেই। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন আনোনি তাঁকে? তাঁকে তুমি (এসপি) কোনও কাজ দাওনি। তাঁকে তুমি (পুলিশ সুপার) কাজ করতে দাও না। তোমরা (পুলিশকর্তারা) নিজেরাই যদি নিজেদের মধ্যে 'গ্রুপ' (গোষ্ঠী) তৈরিকরে নাও, তা হলে মানুষ ভরসা করবে কী করে? ওঁকে (ডিএসপি) কাজে লাগাবে। শীতলখুচিতে-দিনহাটায় কাজে লাগাও। সীমান্ত এলাকায় কাজে লাগাও। সদরে এক জনকে বসিয়ে রাখবে, সে চা-বিস্কুট খাবে বাড়ি চলে যাবে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশ কি নিজেদের মধ্যে কখনও 'গ্রুপ' করে? করে না। আমরা রাজনৈতিক লোকেরা 'গ্রুপ' করি বেশি। আমরা তা-ই জেনে এসছি এতদিন।’’ পুলিশ সুপার ওই কথার ফাঁকে ওই ডিএসপিকে (সদর) নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়ার কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রী তা মানেননি। তবে সাংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রশাসনিকরিভিউ মিটিংয়ে আমরা আমাদের কথা বলতে পারি। আশা করব, এটা নিয়ে আপনারা কাউকে ছোট, কাউকে বড় করবেন না।’’
ঘটনায় শোরগোল পড়েছে কোচবিহার জেলা পুলিশে। চন্দন দাস এক সময় জেলা পুলিশের ডিএসপি (ট্র্যাফিক) ছিলেন। ডিএসপি (সদর) হিসাবে তাঁর দায়িত্বে ছিল কোতোয়ালি, পুণ্ডিবাড়ি এবং সদর মহিলা থানা। এ ছাড়া, পুলিশ লাইনের কাজের দেখভালের দায়িত্ব ছিল। জেলা পুলিশ সূত্রের দাবি, তিনটি থানার দায়িত্ব থেকে ডিএসপিকে (সদর) সরানো হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এক অভিযুক্তকেধরতে কোচবিহারের হরিণচওড়ায় মধ্য রাতে এক বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের মারে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পরেই চন্দনকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়। চন্দন অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেন, সে সময় তিনি গঙ্গাসাগর মেলার ‘ডিউটি’-তে ছিলেন।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরে, চন্দন কিছু বলতে চাননি। এসপিকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘প্রশাসনিক বৈঠক কোন ভাঁড়ামোর পর্যায়েগিয়েছে! বৈঠকে পুলিশমন্ত্রীই পুলিশের দিকে আঙুল তুলছেন। ওঁর পদত্যাগ করা উচিত।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ পাল্টা বলেন, ‘‘কোথাও যদি পুলিশের খামতি থাকে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ পুলিশমন্ত্রীই করবেন। শাসন করার অধিকার তাঁর আছে। তিনি সব পুলিশকে বলেননি। যাঁরা পদত্যাগের কথা বলছেন, তারা সব বুঝেও না বোঝার ভান করছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)