Advertisement
E-Paper

আর্থিক সুদিনও ফিরবে শহরের

স্বাধীনতার পরে উত্তরবঙ্গে যে দু’টি গণ আন্দোলন হয়েছে, তার একটি বালুরঘাট থেকে দিনাজপুরের জেলা সদর সরানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। অন্যটি জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য। প্রথম দাবি সেই কবেই আদায় হয়েছে, জলপাইগুড়ির স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি।

আনন্দগোপাল ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২০
জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ।

জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ।

স্বাধীনতার পরে উত্তরবঙ্গে যে দু’টি গণ আন্দোলন হয়েছে, তার একটি বালুরঘাট থেকে দিনাজপুরের জেলা সদর সরানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। অন্যটি জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য। প্রথম দাবি সেই কবেই আদায় হয়েছে, জলপাইগুড়ির স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি।

ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতার আগে থেকেই জলপাইগুড়িতে আইনজীবীদের সংখ্যা উত্তরবঙ্গের অন্য জেলার থেকে বেশি ছিল। সে সময়ে এমএ, বিএল পাশ করে আইনজীবী হয়ে অনেকে জলপাইগুড়ি আদালতে চলে আসতেন। স্বাধীনতার পরেও সে ধারা বয়েছে। তবে সার্কিট বেঞ্চের দাবি জলপাইগুড়ির আপামর বাসিন্দার ছিল। অরাজনৈতিক ভাবে। আমি নিজেও ধর্না মঞ্চে বসেছি প্রয়াত মুকুলেশ সান্যাল, অলোক মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে। দেখেছি দিন এনে দিন খাওয়া রিকশাচালক, শ্রমিকেরাও কাজে না গিয়ে বেঞ্চের দাবিতে মিছিলে চলেছেন। সকলের একটাই আশা, এই শহর জেলা অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বেঞ্চের হাত ধরে।

এই আশাই আবেগ তৈরি করেছিল। সত্তরের দশকে তখন মেডিক্যাল কলেজ জলপাইগুড়ির হাত ছাড়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও পায়নি এই বিভাগীয় শহর। একের পর এক হতাশা জমতে শুরু করে। এরই মধ্যে আটষট্টি সালের বন্যা জলপাইগুড়ির অর্থনৈতিক শিঁরদাড়া দুমড়ে মুচড়ে দেয়। ক্ষতি ভরাট করতে শহরের পুনর্গঠনের কাজও তেমন হয়নি। হতাশার সঙ্গে শহরের মনে জমতে থাকে অভিমান। সার্কিট বেঞ্চের দাবির মধ্যে জলপাইগুড়ি দেখতে পায় অর্থনীতির মরা গাঙে নতুন জোয়ারের সোনালি রেখা। দল-মত-ভাষা পাশে সরিয়ে রেখে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেঞ্চতের দাবিতে। ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক যারা শহরে এসে কাজ করে, মিছিলের তাঁদেরও মুখ দেখেছি।

এরই মধ্যে দাবি নিয়ে বিভেদ তৈরি হয়। শিলিগুড়িতে বেঞ্চের দাবি ওঠে। একটা কথা কিন্তু ঠিক, যোগাযোগের নিরিখে শিলিগুড়ি সুবিধেজনক অবস্থানে ছিল বা এখনও রয়েছে। এক সময়ে জলপাইগুড়ির পাঙ্গা এবং আমবাড়িতে দু’টি বিমানঘাঁটি ছিল, তাও পরিত্যক্ত। দ্রুত যোগাযোগের উপায় নেই। কিন্তু জলপাইগুড়ির ছিল আবেগ। সেই অস্ত্রে উত্তাল হয় আন্দোলন। সরকারি অফিস বন্ধ, রেল অবরোধ, আদালত অচল। হয়ত এই আবেগকে মর্যাদা দিতেই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় জলপাইগুড়িতেই বেঞ্চ হবে।

তারপরেও তো কতদিন পেরিয়ে গিয়েছে। কত টালবাহানা। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে রাজ্যের বর্তমান সরকার যে চটজলদি ভাবে বেঞ্চের পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তারপরেও বেঞ্চ হয়নি। এখনও ধর্না চলছে।

শুনলাম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বেঞ্চের প্রস্তাব পাশ করেছে। খুব ভাল লাগছে। কেউ কেউ বলছেন ভোট পেতে এই সিদ্ধান্ত। সব রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের বিবেচনা মতো সিদ্ধান্ত নেয়। আমার মতো সাধারণ নাগরিকের তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কাজ নেই। বেঞ্চ হলে শহরের রিকশাচালক থেকে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সকলে লাভবান হবে। আষট্টির বন্যার পলি সরিয়ে মাথা তুলবে শহরের অর্থনীতি। সেটাই শেষ কথা।

(ইতিহাসের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়)

Jalpaiguri Circuit Bench
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy