ত্রিপলের ছাউনির নীচেই ঘর-সংসার। ত্রিপলের আশ্রয়েই কেটেছে ভরা শীত। এ বার ‘দুয়ারে’ গরম। বছর দু’য়েক আগেও মাথায় ছাদ ছিল বৈষ্ণবনগরের পারদেওনাপুরের রমেশ সরকারের। টালির ঘর ছিল রতুয়ার বিলাইমারির হারাধন মণ্ডলের। রমেশ, হারাধনদের ঘর তলিয়েছে গঙ্গাগর্ভে। গঙ্গার ভাঙনে তাঁরা এখন ভিটেহারা। আর কত জনের ঘর-বাড়ি হারালে ঘুম ভাঙবে সরকারের?
কেন্দ্রীয় সরকার বাজেট পেশ করেছে। বাজেটে বরাদ্দ নেই গঙ্গা ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য। মালদহের দু’জন সাংসদ রয়েছে। উত্তর মালদহে বিজেপির খগেন মুর্মু, দক্ষিণ মালদহে কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী। সংসদের ‘জ়িরো আওয়ারে’ ভাঙন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন দুই সাংসদই। পরে, সেই ভিডিয়ো নিজেদের সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে ‘পোস্ট’ করেছেন খগেন, ইশা। কিন্তু ঘরের দেওয়াল তাতে সুরক্ষিত হয়নি হারাধনের মতো গঙ্গাপারের লক্ষ লক্ষ মানুষের।
সত্তরের দশকে গঙ্গা নদীর উপরে ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরি হয়। উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের পথ মসৃণ হয়। সত্তরের দশক থেকে মালদহের মানচিত্রও ক্রমশ বদলাতে শুরু করে। এখন জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৪৬টি। এক সময় পঞ্চায়েতের সংখ্যা ছিল ১৪৭টি। কেবি ঝাউবনা পঞ্চায়েত পুরো গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে শতাধিক প্রাথমিক স্কুল, হাই স্কুল, সাধারণ মানুষের বাড়ি, মন্দির, মসজিদ, বিঘার পর বিঘা চাষের জমি।
বছরে দু’বার নদীর পার ভাঙে। বর্ষা এবং সুখা মরসুমে। সে মরসুমগুলিতে ভাঙন রোধের কাজ হয় ঠিকই। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বরাদ্দ হয় কোটি কোটি টাকা। নদীপারে কান পাতলেই শোনা যাবে, কোটি টাকা খরচে ভাঙন রোধের কাজ হলেও নদীপারের বাসিন্দাদের ঘর বাঁচে না। মজবুত হয়ে ওঠে ঠিকাদার সংস্থার কর্তাদের অট্টালিকা। মদত থাকে সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশেরও।
নদী বিশেষজ্ঞদের কথায়, গঙ্গার ভাঙন ঠেকাতে হলে প্রয়োজন নদীর ‘ড্রেজিং’। নদীর গর্ভে পলি জমে রয়েছে। সেই পলি তুলে ফেলতে হবে। সেই সদিচ্ছা নেই কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের, এমনই নালিশ গঙ্গাপারের বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকারকে যৌথ ভাবে ভাঙন রোধে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও এ বারের কেন্দ্রের বাজেটে ভাঙন রোধ নিয়ে কোনও উল্লেখ নেই।
আর কত হারাধন, রমেশ ঘর হারালে টনক নড়বে রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকারের?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)