E-Paper

ছোটদের ক্লাসে পড়াল দ্বাদশের পড়ুয়া

মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলে প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন পড়ুয়া। বাতিলের তালিকায় রয়েছেন স্কুলের সাত শিক্ষক। তার জেরে স্থায়ী শিক্ষক এখন ১৫ জন।

নীতেশ বর্মণ

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৫০
ক্লাস নিচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া বিউটি দাস। সোমবার শিলিগুড়ি মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলে।

ক্লাস নিচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া বিউটি দাস। সোমবার শিলিগুড়ি মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা চলছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে সোমবার চাকরিহারা শিক্ষকদেরও অনেকে স্কুলে যাননি। তাঁদের অনেকেই কলকাতায় ছিলেন। তাই স্কুলে পরীক্ষকের দায়িত্ব কারা নেবেন, কারা ক্লাস করাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন প্রধান শিক্ষক। অবশেষে স্কুলের উঁচু ক্লাসের এক পড়ুয়াকে দিয়ে ছোটদের ক্লাস করাতে হল। শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার বিধাননগরের মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলের ঘটনা। এ দিন সেখানে ক্লাসে পড়ায় স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিউটি দাস। তাকে দিয়ে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস করানো হয়।

মুরালিগঞ্জ হাইস্কুলে প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন পড়ুয়া। বাতিলের তালিকায় রয়েছেন স্কুলের সাত শিক্ষক। তার জেরে স্থায়ী শিক্ষক এখন ১৫ জন। বাতিল তালিকার চার জন বিজ্ঞানের শিক্ষক। সব ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য এখন ওই স্কুলে মাত্র দুই জন বিজ্ঞানের শিক্ষক থাকলেন। প্রধান শিক্ষক সামসুল আলমের বক্তব্য, ‘‘উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের দিয়ে ক্লাস করালে কিছুটা হলে‌ও স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।’’ তবে উঁচু ক্লাসের ওই পড়ুয়াদের ক্লাসও যাতে ফাঁকি না যায়, সে জন্য তাদের পাঁচ-সাত জনকে দিয়ে বিভিন্ন সময় ছোটদের ক্লাস নেওয়া হবে বলে তাঁর দাবি। তবে সে জন্য ওই পড়ুয়াদের কোনও পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না। স্কুলের তরফে পুরষ্কৃত করা হবে। এ নিয়ে বিউটির বক্তব্য, ‘‘ছোটদের পড়ালে বিষয়গুলি নিজেদেরও অনেকটা সরগর হয়। ভালই লাগে।’’

শিক্ষা জেলার ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তনীরাও। স্কুল সূত্রে খবর, সেখানে ২৫ জন প্রাক্তনী আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসাবে বিভিন্ন ক্লাস করাচ্ছেন। তাঁদের অনেকের দাবি, স্কুলে পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন। গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার ভাইবোনরাই সেখানে পড়তে যান। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন তাঁরা। চাকরি বাতিলের নির্দেশের পরে ক্লাস যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য বিভিন্ন ক্লাস নিতে চাইছেন নিজেরাই। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘প্রাক্তনীরা স্কুলকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’’ এক প্রাক্তনীর বক্তব্য, ‘‘চাকরি বাতিলের বিষয়টি মর্মস্পর্শী। আমাদের মজুরি যেমনই হোক, এই মুহূর্তে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।’’

শুধু মুরালিগঞ্জই নয়, শিলিগুড়ির অনেক স্কুলেই কোথাও নির্দিষ্ট বিষয়ের ক্লাস বন্ধ তো কোথাও ঘণ্টা বাজানোর কর্মীর অভাব। নকশালবাড়ি নন্দপ্রসাদ হাইস্কুলে একাদশ, দ্বাদশের বিজ্ঞানের সমস্ত শিক্ষকের নাম বাতিলের তালিকায় রয়েছে। ফলে বিজ্ঞানের ক্লাস বন্ধ ছিল বলে দাবি। যদিও প্রধান শিক্ষক নীতিশ ঘোষের দাবি, ‘‘স্কুলে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা চলছে।একাদশ, দ্বাদশের পড়ুয়াদের উপস্থিতি কম। পরীক্ষা শেষ হলে চাপ বাড়বে।’’

শহরের রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠে গ্রুপ-ডি কর্মীর নাম বাতিলের তালিকায় থাকায় সে সমস্ত কাজে স্কুলে সমস্যা বাড়ছে বলে দাবি। বাগডোগরা শুভমায়া সূর্যনারায়ণ হাইস্কুলের ১১ জন শিক্ষকের নাম বাতিলের তালিকায় রয়েছে। ক্লাসে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন তার মতো অনেক স্কুলই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Siliguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy