Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
কলেজে মোটরবাইক চেপে ছাত্রনেতা, বিলি হচ্ছে ফোন নম্বরের লিফলেট
College Admission Syndicate

ভর্তির চাপে বন্ধ ঝাঁপ

বন্ধ: জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের সামনে ঝাঁপ নামানো সব দোকানের। ছবি: সন্দীপ পাল

বন্ধ: জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের সামনে ঝাঁপ নামানো সব দোকানের। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৫:২৭
Share: Save:

কলেজের বাইরে পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চায়ের দোকান। সাবধান করা হয়েছে অন্য দোকানিদেরও। একটু বাদে এসে পড়বেন সাংসদ। তার আগেই হঠাৎ কলেজ চত্বরে ঢুকে পড়লেন সেই যুবক। মোটরবাইকের সশব্দ প্রবেশ।

আনন্দচন্দ্র (এসি) কলেজের ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ অভ্রদীপ রায় তখন বলছিলেন, “আমরা তো থাকতেই পারি। যাঁরা ভর্তি হতে এসেছেন, তাঁদের সাহায্য করছি। বহিরাগত কেউ নেই।” অভ্রদীপের কথা তখনও শেষ হয়নি। সেই সময়ে মোটরবাইকের প্রবেশ ছাত্রনেতাকে নিয়ে। তবে দাঁড়াননি এক মিনিটও। ক্যামেরা দেখেই বাইকের মুখ ঘুরিয়ে কলেজ ছাড়লেন সঙ্গে সঙ্গে।

এসি কলেজের ভর্তি-নাট্যে আরও চমক বাকি ছিল। এ দিনই কলেজ পরিদর্শনে এসেছিলেন পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন। তিনি ঢুকতেই ছাত্র সংসদ এবং টিএমসিপির নেতারা ঘিরে ধরেন। ভর্তি হতে আসা কয়েক জন পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে সাংসদ বিজয়বাবু ফিরে যান। যাওয়ার আগে বলেন, “কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়ে কোনও সমস্যা বা অভিযোগ নেই। কেউ কোথাও ভর্তি প্রভাবিত করছে না।”

সাংসদ যখন কলেজে তখন বাইরে টহল শুরু করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় কলেজের সামনের চায়ের দোকানগুলি। কলেজে ভর্তি চলাকালীন দোকান বন্ধ রাখতে হবে বলে পুলিশ নির্দেশ দিয়েছে। কেন? কোতোয়ালি থানা সূত্রের খবর, কলেজের সামনের চায়ের দোকানে বহিরাগতরা জড়ো হয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে নানা লেনদেন চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। কলেজের উল্টো দিকে অন্য দোকানগুলিকেও বহিরাগতদের আড্ডা নিয়ে সর্তক করেছে পুলিশ।

পুলিশের এই দাবি ও অভিযানের সঙ্গে সাংসদের বক্তব্যের কোনও মিল নেই। যেমন মিল নেই কলেজের অধ্যক্ষ মহম্মদ আব্দুর রজ্জাকের জবাবেরও। তিনি বলেন, “বাইরে কি হচ্ছে, বলতে পারব না। তবে কলেজের ভিতরে বহিরাগতদের বরদাস্ত করা হচ্ছে না। আমার কাছে ভর্তি নিয়ে আজকেও অভিযোগ জমা পড়েনি।”

অধ্যক্ষ আর সাংসদ যা-ই বলুন, ছাত্রনেতাদের ভিড় শুরু হচ্ছে কলেজের গেট থেকেই। সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েক জন। সকলেই টিএমসিপি-র সদস্য। তাদের আবার দু’টি দল। দুই দল আলাদা করে লিফলেট বিলি করছে। কেউ ভর্তি হতে এলেই এগিয়ে যাচ্ছেন ছাত্র নেতারা। এক নেতাকে বলতে শোনা গেল, “লিফলেটে আমাদের ফোন নম্বর রয়েছে। যে কোনও বিষয় হয়ে যাবে।” সেটা কেমন? প্রাণীবিদ্যায় মেধা তালিকায় দেড়শোর মধ্যে নাম থাকলেও এক ছাত্র ভর্তি হতে পারেনি। তার থেকে নীচে থাকা অন্যরা ভর্তি হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি। ছাত্রের দাবি, “দাদারা আমার ফোন নম্বর রেখে দিল। পরে ফোন করবে বলল।”

মঙ্গলবার সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টি জলপাইগুড়িতে। তাতে অবশ্য ছাত্রনেতাদের উপস্থিতিতে ব্যাঘাত ঘটেনি। কেউ এসেছিলেন হাফপ্যান্ট পরে কেউ বা থ্রি কোয়ার্টার। তাঁদের দাবি, যে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হতে আসছেন, তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে মাত্র। কলেজ ইউনিটের সভাপতি অরিজিত সেনও ছিলেন কলেজে। তাঁরও দাবি, “আমরা সাহায্য করছি মাত্র। বহিরাগতরা না ঢুকলেই হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE