সব কিছু ঠিকঠাক চললে, চলতি মাসেই শুরু হতে চলেছে তিনটি দেশের সংযোগকারী এশিয়ান হাইওয়ের নির্মাণ কাজ। শুরুর আগেই আর্ন্তজাতিক এই সড়ক পথেও ছায়া ফেলেছে অবৈধ দখল উচ্ছেদের ‘কাঁটা’। তাই, কোনও ঝুঁকি না রাখতে রাস্তার দু’পাশে দখলদার উচ্ছেদের আগেই ক্ষতিপূরণ বিলি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
নেপাল-ভারত-বাংলাদেশকে যুক্ত করা এশিয়ান হাইওয়ে তৈরির কাজের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ হয়ে গিয়েছে। নেপালের কাঁকরভিটা থেকে শিবমন্দির-মেডিক্যাল মোড় দিয়ে শিলিগুড়ি লাগোয়া ফুলবাড়ি হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত নতুন ৩৩ কিলোমিটারের সড়ক তৈরি হবে। জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক দিয়ে বর্তমানে নতুন সড়ক পথের পুরোটাই যুক্ত রয়েছে। সে কারণে নতুন করে সড়ক তৈরির পরিবর্তে পুনর্গঠন এবং সম্প্রসারণ করতে হবে। সড়কের ১১ কিলোমিটার চার লেন, বাকি অংশ দুলেনের হবে। সে কারণে পুরো অংশেই সম্প্রসারণ কাজ হবে। পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ৩৩ কিলোমিটার পথের দু’পাশে দখলদারের সংখ্যা দু’হাজারেরও বেশি। সবই চিহ্নিত করা হয়েছে। দখলদারদের ক্ষতিপূরণে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। উচ্ছেদের সময়ে কেউ বাঁধা দিলে অথবা মামলা করে বসতে পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই আশঙ্কা দূর করতেই ক্ষতিপূরণ বিলির পরেই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
আপাতত ফুলবাড়ি এলাকায় জাতীয় সড়কের দু’পাশে গাছ কাটতে শুরু করেছে পূর্ত দফতর। এরপরেই শুরু হবে ক্ষতিপূরণ বিলি। তা নিয়ে কোনও সমস্যা হলে, আলোচনার মধ্য দিয়ে মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলেও প্রশাসনের আধিকারিকরা মনে করছেন। তার পরে শুরু হবে উচ্ছেদ পর্ব। পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার নির্মল মণ্ডল বলেন, ‘‘নেপাল থেকে বাংলাদেশ সড়ক পথের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে সম্প্রসারণ হবে, তার জন্য বন দফতরের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটার কাজ চলছে। ক্ষতিপূরণ বিলির পরে রাস্তার দু’পাশে থাকা নানা কাঠামো সরানো হবে।’’
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এই সড়কের প্রায় এক তৃতীয়াংশই জাতীয় সড়ক হয়ে যাবে। ৩১ডি জাতীয় সড়কের ফুলবাড়ির অংশ দিয়েই পূর্ব-পশ্চিম হাইওয়ে য়াওয়ার কথা। চার লেনের প্রস্তাবিত রাস্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এশিয়ান সড়কের যে অংশ ফুলবাড়ির জাতীয় সড়ক ধরে যাবে সেটিও চার লেনের তৈরি হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে বাকি এলাকায় এবং বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে দু’লেনের সড়কই তৈরি হবে। টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডার পর্ব মিটে গেলেও, কাজ শুরুর আগে সব দিক ভালভাবে খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করতে চাইছে পূর্ত দফতর। কারণ হিসেবে পূর্ব-পশ্চিম চার লেনের মহাসড়কের কাজ জমি জটে আটকে থাকার উদাহরণ দিয়েছেন কর্তারা।
গুজরাতের পোরবন্দর থেকে অসমের শিলচর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের পূর্ব পশ্চিম মহাসড়কের কাজ উত্তরবঙ্গে এসেই থমকে রয়েছে। ১৪টি জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া মহাসড়কের কাজ ৩১ডি তে এসেই থমকে গিয়েছে। ধূপগুড়ি-মোহিতনগর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ উচ্ছেদ্দ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ায় রাস্তার কাজ আটকে রয়েছে। সে কারণেই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানালেন, যেহেতু এই সড়কের সঙ্গে আরও দু’টি দেশ জড়িয়ে রয়েছে, তাই রাস্তার কাজ কোনওভাবে আটকে গেলে আর্ন্তজাতিক স্তরে আলোচনা হতে পারে। তার জেরে মুখ পোড়ার আশঙ্কার রয়েছে রাজ্যের পূর্ত দফতর এবং প্রশাসনের। তাই ধাপে ধাপে সম্প্রসারণের কাজ শেষ করতে চাইছে দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy