Advertisement
E-Paper

মাফিয়া চক্রে পুরসভার জমি? নালিশ

২০১৬ সালে স্থানীয় এক ব্যক্তি কিছু লোকজন নিয়ে ওই জমির দখল নিতে যান। তখনই খোঁজ নিয়ে পুর-কর্তারা জানতে পারেন, তাঁদের কেনা জমির প্রায় ৫১ বিঘা স্থানীয় এক ব্যক্তির নামে খতিয়ানভুক্ত হয়ে গিয়েছে। সমস্ত নথিপত্র-সহ সেই সময়ই ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানান পুর-কর্তারা।

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৫
নথি: রাজগঞ্জের বিএলআরওকে জমি সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলে চিঠি জলপাইগুড়ির ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের।

নথি: রাজগঞ্জের বিএলআরওকে জমি সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলে চিঠি জলপাইগুড়ির ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের।

সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরকন্যায় মাস তিনেক আগের সেই প্রশাসনিক সভায় তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন এই সব মাফিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ভূমি সংস্কার দফতরের কিছু কর্মীও যে জমির অবৈধ কারবারে যুক্ত, তা-ও বলেছিলেন তিনি। এ বারে তাঁর সফরের মধ্যেই ফুলবাড়িতে একটি ৫১ বিঘা জমি দখলে মাফিয়া চক্রের তৎপরতা নিয়ে অভিযোগ আনলেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে এই বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও দাবি করলেন।

শিলিগুড়ি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জল প্রকল্পের জন্য ১৯৯৪ সালে ফুলবাড়িতে ৮৭.২৪ একর জমি কেনা হয়েছিল। জলের একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর পরে বাকি জমি ফাঁকাই পরে রয়েছে। ওই প্ল্যান্ট থেকেই গোটা শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সরবরাহ হয়। ২০১৬ সালে স্থানীয় এক ব্যক্তি কিছু লোকজন নিয়ে ওই জমির দখল নিতে যান। তখনই খোঁজ নিয়ে পুর-কর্তারা জানতে পারেন, তাঁদের কেনা জমির প্রায় ৫১ বিঘা স্থানীয় এক ব্যক্তির নামে খতিয়ানভুক্ত হয়ে গিয়েছে। সমস্ত নথিপত্র-সহ সেই সময়ই ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানান পুর-কর্তারা।

মাফিয়া চক্রের ভুয়ো খতিয়ান করে ওই জমি দখল করার ছক কষেছে বলে অভিযোগ করে শিলিগুড়ির মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য জানান, সরকারি হিসেবে ওই এলাকায় প্রতি বিঘা জমির দাম প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। সেই হিসেবে ওই ৫১ বিঘা জমির দাম সাড়ে ২৫ কোটি টাকা। যদিও এলাকার জমির কারবারিদের মতে, জমির বাজার দর প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। অনেকের সন্দেহ, সেই জমি হাতানোর জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি।

অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমি থানাতেও বিষয়টি জানিয়েছি। স্থানীয় ভূমি সংস্কার দফতরেও জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছি।’’ তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় এক ব্যক্তির নামে সংশ্লিষ্ট জমি নথিভুক্ত করে দিয়েছে রাজগঞ্জ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দফতর।

পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, পুরসভার অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৬ সালেই জলপাইগুড়ি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রাজগঞ্জের বিএলএলআরওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। একদল ব্যক্তি ওই জমিতে জোর করে নির্মাণ কাজ করতে চাইছে বলে ৩ অক্টোবর ফের পুরনিগমের পক্ষ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে হেতু সরকারিভাবে জমি কেনা হয়েছিল, তাই নিয়ম মেনে সেই সময় রাজগঞ্জ বিএলএলআরও দফতরের মাধ্যমে জমির নথিপত্র যাচাই করে নেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষ থেকেই সমস্ত নথি যাচাই করে মানচিত্র বানিয়ে যে সব জমি কেনা হয়েছে, সেগুলি ত্রুটিমুক্ত বলে পুরসভাকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। তার পরই জমি কেনা হয়।’’

অশোক বলেন, ‘‘আমাদের আধিকারিকরা কথা বলতে গেলে ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা অভব্য আচরণ করেন। আমি সমস্ত নথিপত্র নিয়ে ভূমি সংস্কার দফতরের প্রধান সচিবের কাছে যাব।’’

রাজগঞ্জের বর্তমান বিএলএলআরও রূপকচন্দ্র ভাওয়াল বলেন, ‘‘মাত্র ছ’দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। সমস্যার কথা প্রথম শুনলাম। দ্রুত বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ রাজগঞ্জের তৎকালীন বিএলআরও শুভ্রজিৎ মজুমদারকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না।’’ দফতরের পুরনো আধিকারিকরাও অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

Complaint Land Mafia Municipality Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy