এমন দৃশ্য জলপাইগুড়িতে চেনা। — সন্দীপ পাল
পরপর তিন বছর শহরে থাবা বসিয়েছিলেন জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। মৃত্যুও হয়েছিল। ট্রপিক্যাল মেডিসিন, এইমস সহ দিল্লি-কলকাতার নানা সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি বিশেষজ্ঞ দল শহরে এসেছিল সংক্রমণের কারণ খুঁজতে। সব দলের রিপোর্টেই দায়ী করা হয়েছিল দূষণকে। আবর্জনার স্তূপ, তাতে শুয়োর-কুকুরের দাপাদাপি, নোংরা জলে মশার বংশবিস্তারের তথ্য-ছবি সংগ্রহ করেছিল বিশেষজ্ঞ দল। সর্তক করে দিয়েছিল পুরসভা-প্রশাসনকে। তারপরে সরকারি স্তরে নানা বৈঠক-সভা-সেমিনার হয়েছে। যদিও, জলপাইগুড়ি শহরের দূষণ চিত্রে আদৌও কোনও বদল হয়েছে কী সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে দাবি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ বাসিন্দাদের একাংশের।
দৃশ্য এক: বিশ্ববঙ্গ ক্রীড়াঙ্গণ যাওয়ার রাস্তার পাশে রাখা ভ্যাটের থেকে উপচে পড়ছে আবর্জনা। ভ্যাটের চারপাশে জঞ্জালের পুরু স্তর শক্ত হয়ে জমে গিয়েছে। সেই আর্বজনার খাঁজে দিনকয়েক আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টির জল জমে কালো রঙ। আবর্জনা বেয়ে ভ্যাটের ওপরে দাপাচ্ছে কুকুরের দল, নীচে মাটিতে ঘুরছে শুয়োর। শুধু ভ্যাট নয়, রাস্তার একপাশের জলা জমিতে জমে রয়েছে স্তরে স্তরে আবর্জনা। তাতেও কুকুর-শুয়োরের সুখের সংসার। পরিবেশ প্রেমীরা প্রতিদিনই এই দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠেন। পুরো এলাকাই মশার আঁতুরঘর এবং বিষাক্ত কীটপতঙ্গের আস্তানা বলে অভিযোগ। কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও পরিস্থিতি বদলায় না বলেও অভিযোগ।
দৃশ্য দুই: দিনবাজার মাছ বাজার। বাজারের এক কোণায় ডাঁই করে রাখা থার্মোকলের বাক্স। প্রতিটা বাক্সের মধ্যে রয়ে গিয়েছে জল। আঁশটে গন্ধ , ভনভন করছে মশা-মাশি। আবর্জনার স্তূপের ওপরে উড়ে বেড়ানো অথবা জন্ম নেওয়া মশার দল কখনও বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাদের শরীরে রক্তে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে কখনও বা বিক্রির জন্য মজুত মাছের গায়ে বসছে। পরিবেশ প্রেমীদের দাবি, রোগ সংক্রমণের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে দিনবাজার মাছ বাজার।
দৃশ্য তিন: সার্কিট বেঞ্চের প্রস্তাবিত অস্থায়ী ভবন লাগোয়া তিন নম্বর ঘুমটি এলাকা। রেল লাইনের পাশেই ডাঁই করা জঞ্জালের স্তূপ। একদিকে নর্দমার দেওয়াল ফুড়ে দিয়েছে আগাছা। নর্দমাতেও গড়িয়ে পড়ছে আবর্জনা। জমা জল-আবর্জনা মশার লার্ভায় ভরে গিয়েছে বলে অভিযোগ। রেল লাইনের পাশে শুয়োরের দাপাদাপি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও।
এমন ভাবেই দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়িতে। তাতে বাড়ছে নানা রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও। অভিযোগ, শহরের রেসকোর্স পাড়া, বৌ বাজার কিংবা মিউনিসিপালিট মার্কেটের সামনে, কামারপাড়ার দিক থেকে দিনবাজারে ঢোকার মুখে, হাকিমপাড়া সহ শহরের অনেক এলাকাতেই প্রতিদিনই প্রচুর আবর্জনা জমা হয়৷ পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মণ্ডলের কথায়, “শহরে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে হয়তো দুই-তিন গাড়ি নোংরা আবর্জনা পড়ে থাকে ৷ অথচ পুরসভার কর্মীরা সেখানে একবার গাড়িতে যেটুকু আবর্জনা সরানো যায় সেটুকুই নিয়ে চলে যান। বাকি আবর্জনা সেখানেই জমে থাকে৷”
শহরের কিছু এলাকায় কিছু সময়ের জন্য জঞ্জাল জমে থাকার কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু। তবে শহর জুড়েই জঞ্জাল জমে রয়েছে এমন অভিযোগ ঠিক নয় দাবি করে মোহনবাবু বলেন, ‘‘নিয়মিত দু থেকে তিন বার জঞ্জাল সাফ হয়। তবে তার মাঝে জঞ্জাল জমতে পারে। জঞ্জাল থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে জলপাইগুড়িতে, এ কথা ঠিক নয়।’’
জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক রাজা রাউতের কথায়, ‘‘রাস্তার পাশে জমে থাকা নোংরা-আবর্জনার স্তুপ সরাতে আরও একটু সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন পুরসভার৷’’ পুরসভার তরফে প্রতিদিন সকালে জলপাইগুড়ি শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে ৷ কিন্তু শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুর কর্মীরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহে যান না৷ যারফলে বাড়িতে একটু আবর্জনা জমলেই অনেকেই তা রাস্তা পাশে ফেলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy