কোচবিহার বিমানবন্দরে বিমান। — ফাইল চিত্র
এ বারে কলকাতা-কোচবিহার সরাসরি উড়ানে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, পুজোর আগেই কোচবিহারে ৪২ আসনের বিমান নামানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
পরিবহণ দফতরের তরফে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই ব্যাপারে সরাসরি নজর রাখছেন বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “কোচবিমান বন্দরের যে রানওয়ে রয়েছে তাতে ৪২ আসনের বিমান সহজেই মানতে পারবে। কোনও অসুবিধে হবে না। পুজোর আগেই ওই বিমান নামানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়া রানওয়ে বাড়িয়ে বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।”
রাজ্য সরকারের ওই উদ্যোগে খুশি কোচবিহারের বাসিন্দারা। বারবার জেলা থেকে দাবি তোলা হয়েছিল, কোচবিহার-কলকাতা সরাসরি বিমানের। কিন্তু তা হয়নি। ৯ আসনের একটি বিমান চালানো হলেও তা দুর্গাপুর, বাগডোগরা হয়ে কোচবিহার পৌঁছয়।
কোচবিহার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক রাজেন বৈদ বলেন, ‘‘আমরা সরাসরি বিমান চালানোর কথা বার বার বলেছি। যেখানে কোনও প্রয়োজন নেই সেখানে বিমানে গেলে যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনই ভাড়াও বেশি পড়ে। ফলে তা কার্যকরী হওয়া মুশকিল। এ বারের উদ্যোগ সফল হবে।” পাশপাশি বাসিন্দাদের তরফে বেশি আসনের বিমানের পক্ষেই মত দেওয়া হয়েছে। ৯ আসনের বিমান নিয়ে অনেকেই আগ্রহী নন।
বাসিন্দাদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, ৯ আসনের বিমানটি নিয়মিত ছিল না। এমনকি টিকিট কোথা থেকে মিলবে কী ভাবে মিলবে, সে সংক্রান্ত তথ্য ঠিক মতো পাওয়া যেত না বলে অভিযোগ। সে কারণে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এ ব্যাপারে এ বারে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে, সে দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
কিছু দিন আগে অন্ডাল বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ফোসিনের সদস্য তথা দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, ‘‘আমি বরাবর বলেছি সরকারের উপরে এ ব্যাপারে আমরা আশা রাখি। এ বারে যে উদ্যোগ হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। কিছু দিনের মধ্যে কোচবিহার থেকে বিমান চলতে শুরু করবে বলে আশা রাখি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহারে রাজ আমলে বিমানবন্দর গড়ে ওঠে। এক সময় কোচবিহার থেকে নিয়মিত বিমান চলাচল করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকেই ওই পরিষেবা চালু নিয়ে টানাপড়েন চলছে। বাম আমলের পরে তৃণমূলের আমলেও ওই অবস্থার পরির্তন হয়নি। ২০১১ সালে একটি সংস্থা কোচবিহার থেকে বিমান চলাচল শুরু করেও বন্ধ করে দেয়। ২০১৫ সালের মে মাসে আবার পিনাকল এয়ারলাইনস নামে একটি সংস্থা বিমান চালানো শুরু করে। দিন কয়েকের মধ্যে সেটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর স্পিরিট এয়ারলাইনস সরকারি ভর্তুকিতে বিমান চালানো শুরু করে। সপ্তাহে চার দিন ওই বিমান চলাচল শুরু হয়। প্রথম দিকে নিয়মিত ভাবে ওই বিমান চলে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিক থেকে নানা অজুহাতে পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়। এর পরে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে অনিয়মিত ভাবে বিমান চালানো হয়। এপ্রিল মাস থেকে থেকে বিমান চলাচল টানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তখন থেকেই হতাশ শহরের বাসিন্দারা।
ওই সংস্থার কর্তারা দাবি করেন, অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে তাঁরা বিমান চালাচ্ছিলেন। সেই সংস্থা দুই মাস ধরে বকেয়া দিচ্ছেন না, তাই তাঁরা বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছেন। এ বারে সরকার ফের উদ্যোগী হওয়ায় আশার আলো দেখছে কোচবিহার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy