Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তোর্সার ভাঙনে আতঙ্ক কোচবিহারে

তোর্সার ভাঙনে বিপন্ন হয়ে পড়েছে কোচবিহার সদর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। তারমধ্যে কোচবিহারের পুরসভা এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম। বেশীরভাগ এলাকাই নদীর অসংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদী ফুঁসতে শুরু করায় ভাঙনের পাশাপাশি অসংরক্ষিত এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের।

তোর্সার ভাঙন। কোচবিহারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

তোর্সার ভাঙন। কোচবিহারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

তোর্সার ভাঙনে বিপন্ন হয়ে পড়েছে কোচবিহার সদর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। তারমধ্যে কোচবিহারের পুরসভা এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম। বেশীরভাগ এলাকাই নদীর অসংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদী ফুঁসতে শুরু করায় ভাঙনের পাশাপাশি অসংরক্ষিত এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার ওই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে নদী লাগোয়া মধুপুর, টাকাগছ, কাড়িশাল গ্রামে যান কোচবিহারের মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা।

বিকাশবাবু বলেন, “তোর্সার জল বেড়েছে। ফি বছর মূলত অসংরক্ষিত এলাকায় সহজে জল ঢুকে পড়ায় সমস্যা বেশী হয়। এবার কিছু এলাকায় ভাঙনও শুরু হয়েছে। এজন্য বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার কথা বলেছি। জরুরিভিত্তিতে কিছু কাজ করা যায় কিনা তা সেচ দফতরকে দেখতে বলব।” সেচ দফতরের কোচবিহারের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার স্বপন সাহা বলেন, “নদীর চর এলাকায় ভাঙন রোধে কাজের সুযোগ নেই। অন্য এলাকাগুলিকে অবশ্য চিহ্নিত করে অস্থায়ীভাবে প্রাথমিক কিছু কাজ হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”

বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর খানেক আগেও কোচবিহার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জনবসতিপূর্ণ চর এলাকা থেকে তোর্সার দূরত্ব ছিল অন্তত ৭০ ফুট। নদীর প্রবাহ ক্রমশ পশ্চিম থেকে উত্তরমুখী হয়ে সরে আসায় দূরত্ব কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। যা পরিস্থিতি তাতে ভরা বর্ষার নদী ফুঁসে উঠলে গোটা বসতি এলাকাই ভাঙনে বিপন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আতঙ্কিত বাসিন্দারা। ভাঙন রোধের প্রার্থনায় এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে গঙ্গা পুজো ও বিশেষ নামাজ। বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রশাসনের কাছে বহু দরবার করেও আখেরে কাজ হয়নি। তোর্সার প্রবাহপথ লাগোয়া মধুপুর, মালতিগুড়ি, দামোদরপুর, যাত্রাপুর, টাকাগছের মত এলাকাতেও ওই এক সমস্যা। নদীর জল বাড়লে বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়ে, কমলেই শুরু হয় ভাঙন। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশকিছু বাড়িঘর, আবাদী জমি, বাঁশঝাড়, ও গাছ নদীতে বিলীন হয়েছে। ভরা বর্ষার আগে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের কাজ না হলে সমস্যা বাড়বে।

টাকাগছের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের কোচবিহার ২ নম্বর ব্লক কমিটির সদস্য নীরেন রায় বলেন, “মরা তোর্সার খাত খনন ও সংস্কার না হওয়ায় নাব্যতা কমেছে। তোর্সার জল বাড়লে উপচে মরা তোর্সার মাধ্যমে টাকাগছ প্লাবিত হয়। এছাড়াও মধুপুর ও লাগোয়া কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে।” কোচবিহার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত বলেন, “দ্রুত বাঁশ, বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে গোটা তোর্সার চর নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেচ দফতর থেকে পুরসভা, প্রশাসন নানা মহলে জানিয়েছি। কিন্ত তারপরেও আখেরে কাজ হচ্ছে না।”

এলাকার বাসিন্দারা জানান, কোচবিহার শহর লাগোয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার সীমানা ঘেষে তোর্সার মূল প্রবাহপথ। শহর রক্ষায় তৈরি বাঁধের ওপারে থাকা ওয়ার্ডের ফাঁসিরঘাট ও চর এলাকায় প্রায় প্রতি বছরই সমস্যা হয়। তবে এবারের মত তা এতটা চিন্তার কখনও হয়নি। এবার নদী এগিয়ে আসায় কয়েকশো পরিবারের বসতবাড়ি, জমিজিরেতের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মালতিগুড়িতেও নদীর গতি পরিবর্তনে পাঁচশোরও বেশি পরিবার বিপন্ন। কাড়িশালেও ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় বাঁধ তৈরির কাজও প্রায় এক সপ্তাহ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তোর্সার চর এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, “বছর খানেক আগে ফাঁসিরঘাট ও চরের জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তোর্সা অনেকটাই নিরাপদ দূরত্বে ছিল। ভাঙনের জেরে গতিপথ পশ্চিম দিক থেকে উত্তরে সরে আসতে শুরু করায় চিন্তা বেড়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch behar torsa river cpm village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE