Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
টিম পিকে-র সামনে বিস্ফোরক কর্মী
Mathabhanga

স্বীকৃতির মঞ্চে বিড়ম্বনায় মন্ত্রী

ঘোষক এক-একজনের নাম ধরে মঞ্চে ডেকে নিচ্ছিলেন। তার পরে সেই কর্মীর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছিলেন খোদ মন্ত্রীমশাই।

না: মঞ্চেই মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণের স্বীকৃতি নিতে অস্বীকার করছেন সেই কর্মী। রবিবার মাথাভাঙায়। নিজস্ব চিত্র

না: মঞ্চেই মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণের স্বীকৃতি নিতে অস্বীকার করছেন সেই কর্মী। রবিবার মাথাভাঙায়। নিজস্ব চিত্র

উৎপল অধিকারী
মাথাভাঙা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

কর্মীদের মান ভাঙাতে গিয়ে যে এমনটা হবে, কে জানত!

রবিবার সকাল থেকেই মাথাভাঙার ‘কিছুক্ষণ’ অতিথি নিবাসে ছিল থিকথিকে ভিড়। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, স্থানীয় পুরপ্রধান লক্ষপতি প্রামাণিক ও দলের অন্য নেতা-কর্মীরা। মঞ্চের সামনের আসনে বসেছিলেন আমন্ত্রিত দলের ৪০ জন পুরনো কর্মী। তাঁরা সকলেই একসময় তৃণমূলে সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের ‘মান’ ভাঙাতে ও আগের মতোই ‘সক্রিয়’ করতে এ দিনের অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল।

ঘোষক এক-একজনের নাম ধরে মঞ্চে ডেকে নিচ্ছিলেন। তার পরে সেই কর্মীর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছিলেন খোদ মন্ত্রীমশাই। মঞ্চেরই এক পাশে দাঁড়িয়েছিলেন টিম পিকে-র জনাকয়েক সদস্য। তাঁরা গোটা ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করছিলেন।

আমন্ত্রিত প্রথম জনকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরেই মঞ্চ থেকে ঘোষক বললেন, ‘‘এ বার আমরা মঞ্চে আসতে অনুরোধ করব আমাদের বহু পুরনো কর্মী শাহজাহান সিরাজকে।’’ শাহজাহান লাঠিতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে মঞ্চে উঠলেন। তার পরেই তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘‘সেই ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করছি। সিপিএমের বিরুদ্ধে নাগাড়ে আন্দোলন করে গিয়েছি। তার পরে দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পরে দল আমার পাশে দাঁড়াল না। কোনও কাজের ব্যবস্থাও করেনি। এই সংবর্ধনা আমি প্রত্যাখান করছি।’’

গোটা হলঘরে তখন পিন পড়ার স্তব্ধতা! হতভম্ব টিম পিকের লোকজন। দলের অন্য নেতা-কর্মীরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠিক তখনই পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলেন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বির্মণ। তিনি উত্তরীয় হাতে শাহজাহানকে ডেকে বলেন, ‘‘তোমার ব্যাপারটা আমরা জানি। আমরা তোমার কিছু করবও। তবে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে সংবর্ধনা গ্রহণ করো।’’

কিন্তু শাহজাহান প্রথমে কিছুতেই রাজি হননি। বরং তিনি বলেছেন, ‘‘এ সব নেতাদের কাছ থেকে স্বীকৃতি চাই না। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা আবার আমাকে কী স্বীকৃতি দেবে!’’ তা হলে এখানে এলেন কেন? শাহজাহানের জবাব, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। অনুষ্ঠানটা তো আসলে তাঁর। তাই এই অনুষ্ঠানে এসেছি। আর আমার এই ক্ষোভ এতদিন নেত্রীর কাছে পৌঁছয়নি। আমার কথা যাতে সংবাদমাধ্যম ও টিম পিকে-র মাধ্যমে নেত্রীর কাছে পৌঁছয় তাই আমার এখানে আসা।’’ পরে অবশ্য মন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দেন, ‘‘তোমার বিষয়টি আমরা দেখব।’’

তার পরে সংবর্ধনা গ্রহণ করেন শাহজাহান।

গত কয়েক দিন ধরেই দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে মাথাভাঙা ও অন্য এলাকায় তৃণমূলের নেতারা পুরনো কর্মীদের মান ভাঙাতে ও তাঁদের চাঙ্গা করতে নানা রকম কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই এ দিন ছিল সংবর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠান। এ দিনের ঘটনার পরে দলের অনেকেই অবাক। তাঁরা বলেন, ‘‘শাহজাহান যে মঞ্চে উঠে এমন কাণ্ড করে বসে তা আমরা ভাবতেই পারিনি।’’

পরে শাহজাহান বলেন, ‘‘যখন দলে স্লোগান দেওয়ার মতো কেউ ছিল না তখন একাই দলের হয়ে স্লোগান দিয়েছি, পোস্টার লিখেছি। কিন্তু দল আমাকে মর্যাদা দেয়নি। আমি এখন ওষুধ কেনার টাকা জোগাড় করতে পারছি না। এক হাজার টাকা করে যে প্রতিবন্ধী ভাতা পাই তা ধার শোধ করতেই ফুরিয়ে যায়। তাই থাকতে না পেরে বাধ্য হয়েই এই ক্ষোভ-দুঃখের কথা মঞ্চে বলেছি। মন্ত্রী তো আমার বিষয়টি দেখবেন বলে কথা দিয়েছেন। দেখা যাক, উনি কী করেন।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘দল পুরনো কর্মীদের যে ভোলেনি সেটা জানাতেই এই সংবর্ধনা। যে কর্মী মঞ্চে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তার বিষয়টি আমরা দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mathabhanga TMC Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE