ফাইল চিত্র।
চা বাগান কি খোলা থাকবে— লকডাউনের চতুর্থ দিনে ফের সামনে এসেছে এই প্রশ্ন। দেশের খাদ্য মন্ত্রক বৃহস্পতিবার রাতে একটি নির্দেশিকা রাজ্যে পাঠিয়েছে। তাতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর একটি তালিকা রয়েছে, যেগুলির উৎপাদন, বিলি বণ্টনকে লকডাউনের সময়েও ছাড় দিতে বলা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে চা এবং কফি। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার চা শিল্পকে লকডাউনের আওতা থেকে ছাড় দিতে আগ্রহী। প্রতিটি জেলার জেলাশাসককে এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে অনুরোধ করেছেন কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের সচিব পুষ্পা সুব্রহ্মণ্যম। একই দিনে রাজ্যের সব চা মালিক সংগঠনের যৌথ কমিটি সিসিপিএ রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দু’টো চিঠি পাঠিয়েছে। একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, চা আবশ্যিক খাদ্য সামগ্রীর আওতায় পড়ে, তাই লকডাউনে বন্ধ হওয়ার কথা নয়। অন্য চিঠিতে আর্জি জানানো হয়েছে, বাগানে কাজ না হলেও যেন কীটনাশক ছেটানোর অনুমতি দেওয়া হয়। রাজ্য বা জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও পদক্ষেপের খবর নেই।
করোনার ধাক্কায় এ বছরের ফার্স্ট ফ্লাশ পুরোপুরি বিপর্যস্ত। স্বাদে গন্ধে চায়ের বাজারে প্রথম ফ্লাশের কদর এবং দাম দুই বেশি। মার্চে প্রথম ফ্লাশের পাতা তোলা হয়। গত এক সপ্তাহ ধরেই ডুয়ার্সের প্রায় সব চা বাগানে পাতা তোলা কমেছে। চা বাগান খোলা থাকলেও শ্রমিকরা কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারও আগে চায়ের রফতানি বন্ধ হয়েছে। চিন, ইরান, জাপান, জার্মানির দরজা চায়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ফ্রেরুয়ারি শেষ থেকেই। তখন থেকে ঘরের বাজারের উপর চাপ পড়তে থাকে। যে সব বাগানের চা সরাসরি রফতানি হয়, সেখানে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যেই লকডাউনের ঘোষণা। চা বাগান লকডাউন থাকবে কিনা তা নিয়ে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি শুরু হয়। এরই মাঝে গত বুধবার থেকে ডুয়ার্সের অধিকাংশ চা বাগান বন্ধ হতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনও চা বাগানে কাজ হচ্ছে না বলে প্রশাসনের কাছে খবর। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়াল। চা মালিকদের সংগঠনের যৌথ মঞ্চ কনসালটেটিভ কমিটি অব প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিসিপিএ) চেয়ারম্যান বিবেক জৈন রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশ চেয়েছেন। বিবেক জৈনের কথায়, “যদি কীটনাশক না ছড়ানো হয়, তা হলে চা বাগিচার অপূরণীয় ক্ষতি হবে।” টানা তিন সপ্তাহ চা বাগানে কীটনাশক না পড়লে চা গাছে রোগ সংক্রমণ হবে। তা সামাল দিতে গোড়ার কিছুটা উপর থেকে চা গাছ কেটে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না, দাবি চা মালিকদের। সেটা হলে লকডাউন ওঠার পরেও তিন মাস চা পাতা উৎপাদন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সামাজিক দূরত্ব মেনে কীটনাশক ছড়ানোর কাজ চলতে পারে বলে চা পরিচালকদের দাবি।
চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলমের কথায়, “করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা চা বাগানে সবচেয়ে বেশি। কোনও ভাবেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করা চলবে না।” চা বাগান খোলা থাকবে, না বন্ধ— তার পুরোটাই নির্ভর করছে জেলা প্রশাসনের উপর। কী বলছে জেলা প্রশাসন। এক আধিকারিকের কথায়, “এখনও কোনও নির্দেশ পাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy