বছর চারেকের ছোট্ট ‘টুকু’ ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে গেটের দিকে চেয়ে। কখনও দৌড়ে ছাদে, কখনও বারান্দায় চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পাক খেয়েই ফের নীচের ঘরে। দু’চোখ বেয়ে জল ঝরছে টুকুর। নিঝুম দুপুরে মাঝে মধ্যেই ওর কেঁদে ওঠার শব্দ ও বাড়িময় ছোটাছুটি সাক্ষী হয়েও নিরুপায় প্রতিবেশীরা। তাঁরা খাবার দিলেও মুখে তুলছে না টুকু। গেটের সামনে থেকে ঘুরে ভেতরে চলে যাচ্ছে।
টুকু আসলে চার বছর বয়সের এক দেশি কুকুর। বালুরঘাট শহরের বেলতলা পার্ক এলাকার একতলা বাড়ির ষাটোর্ধ্ব গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী—দু’জনেই গত শনিবার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারপর থেকেই তাঁদের পোষ্য ওই সারমেয় তিন দিন ধরে ফাঁকা বাড়ি আগলে কেঁদে চলেছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃত ওই গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রী পোষ্যের নাম ‘টুকু’ রেখে মানুষ করেন বলে প্রতিবেশীরা জানান। ফলে তাঁদের দেখতে না পেয়ে ছটফট করছে টুকু। বাড়ি আগলেই পড়ে রয়েছে।
মৃত দম্পতির বিবাহিত একমাত্র মেয়েও অসুস্থ। তিনি মালদহে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। মালদহের চাঁচলে একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন ওই বাড়ির কর্তা। অবসরের পর বালুরঘাটের বেলতলা পার্কের বাড়িতে চলে আসেন। এ দিন প্রতিবেশি রীনা উপাধ্যায়, বলেন, বছর চারেক আগে ওই কুকুর ছানাকে পাড়ার মোড়ের নর্দমা থেকে তুলে এনে মানুষ করেন ওই দম্পতি। এক মেয়ে বিয়েও হয়ে গিয়েছে।’’ গোলাপি বর্মণ জানান, বৃদ্ধ দম্পতি সন্তান স্নেহে মানুষ করেন কুকুরটিকে। গত সপ্তাহে তাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হন। শনিবার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁদের মালদহ মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
একদিনেই বাড়ির দুই মালিকের কোভিডে মৃত্যুর পর পড়শিরাও ওই বাড়ি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এক প্রতিবেশীর কাছে থাকা গেটের চাবি খুলে দিলেও কুকুর বাইরে বের হয়নি। রাতের দিকে তার কান্না বেড়ে যায়। অবলা জীব হলেও কুকুরের অনুভূতি ও কান্না দেখে এ দিন আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি প্রতিবেশী মহিলা গোলাপিদেবী। তিনি বলেন, ‘‘গেটের সামনে খাবার দিয়েও ডেকে বলেছি এমন করলে তুইও তো মারা পড়বি। বুঝল কি না জানি না।’’ তবে প্রভুর শোকে ভক্ত টুকুর (কুকুর) মায়া দেখে পড়শিরাও এখন আকুল হয়ে পড়েছেন।