যথাক্রমে: নামের তালিকা হাতে এক পুরোহিত। নিজস্ব চিত্র
পুজো সবে শুরু হয়েছে। মন্ত্রোচ্চারণে শোনা যাচ্ছে, ‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে...।’ তখনই বেজে উঠল ফোন। মুহূর্তের জন্য মন্ত্র থামিয়ে কানে লাগানো ব্লু-টুথে পুরোহিতকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আরও ৮টা পুজোর পরে কথা বলতে পারব। এখন মন্ত্র পড়ছি। দয়া করে বিরক্ত করবেন না।’’
ফের পুজো শুরু। কিন্তু, মোবাইল ফোন ‘সাইলেন্ট’ না থাকলে বাজবেই। অগত্যা, আবারও মন্ত্রোচ্চারণ থামিয়ে সবে তিরিশের চৌকাঠ পেরোনো পুরোহিত সুজিত গঙ্গোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গেল, ‘‘হ্যালো, বলুন।’’ মনে হচ্ছিল, মন্ত্রোচ্চারণে খুশি হয়ে স্বর্গ থেকেই কেউ ফোনে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তবে, পরক্ষণেই বোঝা গেল কেউ তাঁকে তাগাদা দিচ্ছেন। বারবার পুজো বন্ধ হওয়ায় বিরক্ত বাড়ির সদস্যরাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে সুজিত বললেন, ‘‘আরে আপনার ছেলে উপোস করে আছে তো কী হয়েছে! একদিন একবেলা না খেলে কিছু হয় না। দেবী বন্দনার জন্য বাচ্চাকে একটু কষ্ট করতে শেখান।’’ এর পরে ঝড়ের গতিতে পুজো করে মিনিট ১৫ মধ্যেই চলে গেলেন পুরোহিত মশাই। শনিবার শুক্লা পঞ্চমীর দিন এমনই ব্যস্ত দেখা গেল শিলিগুড়ির অধিকাংশ পুরোহিতকে। যা দেখে অনেকেরই ‘টি-টোয়েন্টি’ ক্রিকেটের কথা মনে হয়েছে। ঝোড়ো ব্যাটিং চালিয়ে সেঞ্চুরির মতো ৬০ মিনিটে পাঁচটি পুজোর রেকর্ড গড়েছেন অনেকে। লক্ষ আরও বেশির।
অবশ্য এমন হবে না কেন? প্রতিবছরের মতো এবারও পুরোহিতের আকাল। হোক না দু’দিনের পুজো। শনিবার সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে পুজো শুরু হতেই পুহোতিদের নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। হাকিমপডা়য় পুজোয় বসলে কুণ্ডপুকুর থেকে তাগাদা। সেখানে গেলে কলেজপাড়া থেকে ফোন। চম্পাসারিতে থাকলেও দেশবন্ধুপাড়া থেকে হাতছানি। কেউ আবার ফোনাফোনির পথে না হেঁটে রাস্তায় বেরিয়ে বাইক, স্কুটি, সাইকেল থামিয়ে ‘পুরোহিত ছিনতাই’-এর চেষ্টা করেছেন। কেউ সফল হয়েছেন। কেউ নয়।
যেমন, তিন দশক ধরে পুজো করেন তাপস চক্রবর্তী এবং তাঁর ভাইয়েরা। তাপস বললেন, ‘‘আগাম ১৫টি পুজোর কথা পাকা হয়েছিল। তাই রাস্তায় জোর করে আটকে পুজো করানোর অনুরোধ মেনে নিতে পারিনি।’’ তাপসরা চার ভাই মিলে ৬০টি পুজো করেছেন শনিবারেই। রবিবার আরও অন্তত ৪০টি।
কেমন দক্ষিণার বাজার? এখন ন্যূনতম ৫০১ টাকা পাওয়া যায় বলে পুরোহিতরা জানান। তবে প্রতিষ্ঠানে পুজোর বরাত পেলে দক্ষিণা কয়েকগুণ বেশিই মেলে। তবে বর্ণালী রায়, মোহিনী রায়চৌধুরীর মতো বধূরা মনে করেন, পুজোর সময়ে পুরোহিত মশাই বারবার ফোনে কথা বললে দেবীবন্দনায় বিঘ্ন ঘটে। বর্ণালী বলেন, ‘‘কিছু করার নেই। পুরোহিত মশাই চটে গিয়ে যদি পরের বার না আসেন। তাই চুপ থাকি।’’ মোহিনী বললেন, ‘‘অঞ্জলির সময়ে চোখ বন্ধ করে ছিলাম। মন্ত্র বলছিলাম। হঠাৎ পুরোহিত হ্যালো বলে উঠেন। আমিও হ্যালো বলে ফেলি। পরে বুঝলাম উনি ফোনে কথা বলছেন! সে এক কাণ্ড বটে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy