Advertisement
E-Paper

বিটনের দেহের জন্য অপেক্ষায় দক্ষিণপাড়া

সারি সারি খেজুর গাছ। লাগোয়া বাংলাদেশের রেললাইন উত্তর থেকে চলে গিয়েছে দক্ষিণে। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের উন্মুক্ত দক্ষিণপাড়ার সঙ্গে ওপার বাংলা হিলির তফাতটা কেবল ওই রেলপথ বরাবর পাহারায় থাকা বিজিবির কর্মীরা। তাঁদের দেখেই দু’দেশের সীমানা বোঝা যায়। কাঁটাতার নেই। তেমন ভাবে নেই বিএসএফের প্রহরাও। এই দক্ষিণপাড়াতেই মঙ্গলবার ভারত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে এ দেশের এক নাগরিককে বিজিবি জওয়ানেরা গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ। তাদের গুলিতে আহত হন স্থানীয় এক যুবকও।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৭
হিলি সীমান্তে চলছে ফ্ল্যাগ মিটিং।

হিলি সীমান্তে চলছে ফ্ল্যাগ মিটিং।

সারি সারি খেজুর গাছ। লাগোয়া বাংলাদেশের রেললাইন উত্তর থেকে চলে গিয়েছে দক্ষিণে। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের উন্মুক্ত দক্ষিণপাড়ার সঙ্গে ওপার বাংলা হিলির তফাতটা কেবল ওই রেলপথ বরাবর পাহারায় থাকা বিজিবির কর্মীরা। তাঁদের দেখেই দু’দেশের সীমানা বোঝা যায়। কাঁটাতার নেই। তেমন ভাবে নেই বিএসএফের প্রহরাও। এই দক্ষিণপাড়াতেই মঙ্গলবার ভারত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে এ দেশের এক নাগরিককে বিজিবি জওয়ানেরা গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ। তাদের গুলিতে আহত হন স্থানীয় এক যুবকও।

অভিযোগ, রেললাইনের পরে জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে এপারে দক্ষিণপাড়ার মাঠে ঢুকে বিজিবি-র সাত-আট জনের একটি দল গুলি চালিয়েছিল। তাতেই নিহত হন বিটন বর্মন নামে ওই যুবক। বিজিবি তারপরে বিটনের দেহ ওপারে টেনে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ। ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও ওই ভারতীয় যুবকের দেহ ফিরে পাননি তাঁর পরিবার। এদিন বিএসএফ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তাঁরা সীমান্তের ওপারের দিকে চেয়ে বসে আছেন। বিটনের মা মিথুনদেবী এখনও পুলিশের কাছ কোনও অভিযোগ করেননি। তিনি জানিয়েছেন, ছেলের দেহ পেলে অভিযোগ করবেন।

বুধবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বিএসএসএফের ডিআইজি যশবন্ত সিংহ বলেন, ‘‘বিজিবি-র সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিঙের মাধ্যমে নিহত যুবকের দেহ পদ্ধতি মেনে ওপার থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ভারতীয় এলাকার মধ্যে ঢুকে গুলি চালিয়ে তারা ঠিক করেনি বলে ফ্ল্যাগ মিটিঙে স্বীকার করে নিয়েছেন বিজিবি-র সেক্টার কমান্ডার আব্দুল রেজ্জাক তরফদার।’’ তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার জড়িত ওই বিজিবি কর্মীদের ডিউটি থেকে ক্লোজ করা হয়েছে।’’ তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিএসএসএফের ডিআইজিকে জানিয়েছেন বিজিবি-র কমান্ডার।

এদিন সকাল ১১টা নাগাদ হিলি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিএসএফ এবং বিজিবির পদস্থ অফিসারদের ফ্ল্যাগ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক ঘন্টা ধরে বিএসএসএফের সংশ্লিষ্ট ৯৬ নম্বর কোম্পানির ডিআইজি এবং বিজিবি-র সংশ্লিষ্ট সেক্টর কমান্ডারের উপস্থিতিতে ওই বৈঠক চলে। আলোচনায় ডিআইজি যশবন্ত সিংহ মঙ্গলবারের দক্ষিণপাড়ায় গুলি চালানোর ঘটনা তুলে ধরলে বিজিবি-র সেক্টার কমান্ডার আব্দুল রেজ্জাক তরফদার ভুল স্বীকার করে অভিযুক্ত বিজিবির কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। পরে বিএসএফের ডিআইজি বলেন, ‘‘নিহত যুবকের ময়নাতদন্ত সহ অন্য প্রক্রিয়া শেষ করে দেহটি এপারে জওয়ানদের হাতে বিজিবি তুলে দেবে বলে ফ্ল্যাগ মিটিঙে জানানো হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, দেহ ফেরত পেতে রাত হবে।

তবে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ জওয়ানেরা পাহারায় থাকা সত্ত্বেও কী করে ভারত ভূখন্ডে ঢুকে বিজিবি-র কর্মীরা স্থানীয় যুবককে গুলি করে ওপারে টেনে নিয়ে গেল, এই প্রশ্নে এদিন এলাকাবাসী সরব ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ডিআইজি যশবন্ত বলেন, দক্ষিণপাড়ায় লোকজনের বসতি ও ঘরবাড়ির পাশে বিএসএফ জওয়ানেরা দাঁড়িয়ে পাহারা দিলে মহিলারা আপত্তি করেন। স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে হামেশাই সমস্যা করে বলেই দক্ষিণপাড়ার ওই বসতি এলাকা ছেড়ে তার দুপাশে জওয়ানেরা পাহারা দেন। পুলিশ সূত্রের খবর, বিজিবি-র গুলিতে নিহত স্থানীয় যুবক বিটনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে। গত বছর এক যুবককে সে গুলি করে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল। মামলাটি এখনও চলছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দক্ষিণপাড়ার ওই উন্মুক্ত এলাকাটি চোরাকারবারের স্বর্গ রাজ্য। এপারের ঘরবাড়ির আড়াল থেকে দুদেশের সীমান্ত রক্ষীর একাংশকে হাত করেই ওই কারবার চলে বলে অভিযোগ। এই কারবার নিয়েই কিছু দিন ধরে বিজিবি-র সঙ্গে বিবাদ চলছিল বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার উভয় দিক থেকেই পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইটের ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারপরেই কার্যত বিনা বাধায় দলবল নিয়ে এপারে ঢুকে বিজিবি-র ওই কর্মীরা বিটনকে গুলি করে দেহ টেনে নিয়ে যেতে পেরেছে।

এদিন এলাকার বাসিন্দা শেফালি বর্মন বলেন, ‘‘আমরা নিরাপত্তা চাই। কয়েক বছর আগে ওই রেললাইনের ধারে আমার স্বামী গরু বাঁধতে গেলে বিজিবি গুলি চালিয়ে দেয়। আমার স্বামী মারা যান। মঙ্গলবারের ঘটনার পর আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’

এ দিকে, একমাত্র রোজগেরে যুবক ছেলে বিটনের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার শোকে দিশাহারা। বিটনের স্ত্রী সুস্মিতা ও তাঁদের ৪ বছরের ছেলে মৃতদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন। সুস্মিতাদেবী বলেন, ‘‘আমার স্বামী পরিস্থিতির শিকার। দুধের শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবো, কী করে চলবে আমাদের, জানি না।’’ মঙ্গলবারের ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী এক মহিলা জানান, বিজিবি-র হামলার সময় এক জওয়ান লুকিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। না হলে এতটাই এলোপাথারি গুলি চলছিল তাতে ওই জওয়ানেরও লেগে যেতে পারত।

বুধবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

Anupratan Mohanta Balurghat BGB police murder dead body India Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy