E-Paper

শিলিগুড়ি করিডরের কাজ শুরু করার পথে কেন্দ্র, উত্তরবঙ্গের মূল সড়ক পরিকাঠামোগুলির নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা

প্রশাসনের অন্দরের তথ্য— উত্তরবঙ্গে জাতীয় সড়কের তকমাপ্রাপ্ত মূল সড়ক পরিকাঠামো প্রায় ১১৯৮ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর মধ্যে কম-বেশি ৭৪৫ কিলোমিটার সড়কের দায়িত্বে রাজ্য পূর্ত দফতর। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) ৩০৩ কিলোমিটার সড়কের দেখভাল করে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ০৭:১৭

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

উত্তরবঙ্গে ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডরের কাজ শুরু করার পথে এগোচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের মূল সড়ক পরিকাঠামোগুলির নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা কেন্দ্র শুরু করেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। প্রধানত সেই সব সড়ক, যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য এবং যা কোনও না কোনও সীমান্ত পর্যন্ত যুক্ত।

প্রশাসনের অন্দরের তথ্য— উত্তরবঙ্গে জাতীয় সড়কের তকমাপ্রাপ্ত মূল সড়ক পরিকাঠামো প্রায় ১১৯৮ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর মধ্যে কম-বেশি ৭৪৫ কিলোমিটার সড়কের দায়িত্বে রাজ্য পূর্ত দফতর। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) ৩০৩ কিলোমিটার সড়কের দেখভাল করে। আর প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার পথ রয়েছে জাতীয় সড়ক এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) অধীনে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, রাজ্যের হাতে থাকা প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার রাস্তাই নিজেদের হাতে নিতে চায় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক (মর্থ)। তাৎপর্যপূর্ণ, এর মধ্যে কোনও রাস্তা বাংলাদেশ সীমান্ত, কোনওটি বা নেপাল কি ভুটান সীমান্ত ছুঁয়েছে।

এক কর্তার কথায়, ‘‘সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক শাখা। বিনিময়ে কেন্দ্র তার খরচ রাজ্যকে দেয়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র পুরো নিয়ন্ত্রণ নিলে, তারা নিজেরাই কাজটা করবে। অনুমান করাই যায়, সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে সড়কগুলির মানোন্নয়ন এবং সম্প্রসারণেরউদ্দেশ্য রয়েছে।’’

জেলা কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত, দু’লেনের রাস্তা কোথাও থেকে থাকলে, তা চার লেনের করে তোলার পরিকল্পনা চলছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অন্দরে। তা হলে সেই রাস্তা দিয়ে সামরিক পরিবহণ সহজেই সম্ভব। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডর সংস্কারের যে কাজ কেন্দ্র হাতে নিয়েছে, তার সঙ্গে এই রাস্তাগুলি এক সূত্রে বাঁধা পড়লে ‘চিকেনস নেক’-এর নিরাপত্তা আরও মজবুত হবে। কারণ, সেখানে তিস্তার উপর দিয়ে নতুন সেতু তৈরি হবে করোনেশন ব্রিজের সমান্তরালে। আবার সেখান থেকেই সম্প্রসারিত হবে জাতীয় সড়ক ১৭। এমনকি, শিলিগুড়ির ভিতরের রাস্তা সম্প্রসারণের পাশাপাশি, ডুয়ার্সের জঙ্গল এলাকা দিয়েও ‘এলিভেটেড করিডর’ পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা চলছে। সেই কারণেই সম্ভবত আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষা বাকি রাস্তাগুলি সংস্কারের পরিকল্পনা চলছে সমান্তরালে। তা ছাড়া, কিছু রাস্তা রয়েছে অসম এবং সিকিম সীমানা পর্যন্ত। সেগুলির সংস্কার এবং সম্প্রসারণ হয়ে গেলে, এ রাজ্য তথা উত্তরবঙ্গ থেকে সিকিম এবং অসমে পৌঁছনো কিছুটা সহজ হবে। সেই সূত্র ধরে ওই রাজ্যগুলি পেরিয়ে চিন এবং বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছনোও আরও সুগম হবে।

এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘অতীতে কোনও বিপর্যয় ঘটলে রাজ্যের হাতে থাকা রাস্তাগুলির সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র, রাজ্যের মধ্যে চাপান-উতোর দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রের হাতেই রাস্তাগুলি থাকলে সেই দায় তাদের উপরেই থাকবে। এতে প্রশাসনিক দৌত্যের সময়ও কমবে। তবে এটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন, রাজ্য পূর্ত বিভাগ দীর্ঘ দিন সেই রাস্তাগুলির রক্ষণাবেক্ষণ খুবই পেশাদারিত্বের সঙ্গে করে চলেছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকটি মাথায় রেখে কৌশলগত কারণে কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিলেবিষয়টি আলাদা।’’

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে নতুন সমীকরণে চিন বা বাংলাদেশ সীমান্তগুলির সুরক্ষায় বাড়তি জোর পড়ছে। সীমান্ত সুরক্ষায় কাঁটাতার লাগাতে বকেয়া কাজের জট কাটিয়ে জমি হস্তান্তরের অনুরোধ খুব সম্প্রতি রাজ্যকে করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন। সমান্তরালে উত্তরবঙ্গের সীমান্ত ঘেঁষা সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় ওই তল্লাটে সামরিক গতিবিধি মসৃণ রাখার উদ্দেশ্যও জড়িয়ে বলে অনুমান।

কার অধীনে কোন রাস্তা—

পূর্ত দফতর—

*ফুলবাড়ি-শিবমন্দির মেডিক্যাল মোড় (ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত, প্রায় ১৪ কিলোমিটার)

*গাজ়োল থেকে বালুরঘাট হয়ে হিলি (১০৬ কিলোমিটার)

*ময়নাগুড়ি-চ্যাংড়াবান্দা (ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, ২০ কিলোমিটার)

*হাসিমারা-সালসালাবাড়ি (ভারত-ভুটান সীমান্ত, ১৭ কিলোমিটার)

*পাণিট্যাঙ্কি-মেচি ব্রিজ (ভারত-নেপাল সীমান্ত, ১.৬ কিলোমিটার)

*ঘোষপুকুর-বক্সিরহাট (বাংলা-অসম সীমানা, ২৫০ কিলোমিটার)

*বিহার সীমানা-সালসালাবাড়ি (১৪২ কিলোমিটার)

*দার্জিলিং-শিলিগুড়ি (৭৭ কিলোমিটার)

*গাজ়োল-লাভা ব্রিজ (৫৯ কিলোমিটার)

*মালদহ রতুয়া-বিহার সীমানা (৫৫ কিলোমিটার)

এনএইচএআই—

*ডালখোলা-ঘোষপুকুর (প্রায় ৯৮ কিলোমিটার)

*সালসালাবাড়ি-সঙ্কোশ (বাংলা-অসম সীমানা, ২৬ কিলোমিটার)

*ঘোষপুকুর-আলিপুরদুয়ার (প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার)

*খড়িবাড়ি-ঘোষপুকুর (২৪ কিলোমিটার)

এনএইচআইডিসিএল—

*সেবক-সিকিম সীমানা (৫২ কিলোমিটার)

*বাগরাকোট-ঋষি (সিকিম সীমানা, প্রায় ৯৭ কিলোমিটার)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

North Bengal India-Bangladesh Border Border Security Force Central Government West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy