ফি বছর অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম, ডেঙ্গি, ভাইরাল ফিভারের সংক্রমণ ঘটছে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।
গত পাঁচ বছরে ছ’শোর বেশি মৃত্যু ঘটেছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস, এইএসে। ডেঙ্গি, ভাইরাল জ্বরের উপসর্গ নিয়েও অনেকে মারা গিয়েছেন। রোগ সংক্রমণের সঠিক কারণ, গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বছরভর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে এই এলাকায় তাই ভাইরোলজি ল্যাবরেটরি গড়ার দাবি উঠেছে বারবার।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ থেকে বছরখানেক আগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ওই ধরনের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি গড়ার অনুমতি দেয়। প্রাথমিকভাবে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। অথচ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন না-মেলায় ওই কাজ এখনও শুরু-ই করা যায়নি বলে অভিযোগ।
উত্তরবঙ্গে ভাইরোলজির ল্যাবরেটরি না-থাকায় কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিসিন বা পুনের ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব ভাইরলজিতে নমুনা পাঠানো, সেখান থেকে রিপোর্ট মেলার অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ওই ল্যাবরেটরি তৈরির জন্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অতিসম্প্রতি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরুর বিষয়টি স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতর দেখছে।’’ তবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদনের কোনও খবর এথনও পৌঁছনি। তাঁরা অপেক্ষাতেই রয়েছেন। কেন এই দেরি কোনও সদুত্তর মেলেনি।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কাজ আটকে থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও সমস্যার জন্য কাজ আটকে থাকলে কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করুন। সমস্ত সাহায্যই করা হবে।’’
ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পর এ রাজ্যে দ্বিতীয় এ ধরনের ল্যাবরেটরি হবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের একটি সূত্রই জানিয়েছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের কাছে ভাইরোলজি’র ল্যাবরটরি গড়ার আবেদন করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল। তারপরে সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই প্রকল্পটি অনুমোদন করে অর্থমন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালকে জানানো হয় আগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থের ‘ইউটিলিইজেশন সার্টিফিকেট’ দিলে তবেই নতুন বরাদ্দ মিলবে।
তড়িঘড়ি সব জোগার করে পাঠালে প্রাথমিক ভাবে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ মেলে। তা খরচ হলে আগামী পাঁচ বছরে প্রকল্পে অন্তত ২০ কোটি টাকা মেলার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু না-হওয়াতে সবই থমকে রয়েছে। অথচ অসম এবং সিকিমে সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে তরফে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অবশ্য মুখে কুলুপ এটেছেন।
এ বছর শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৯০০ জন। ভাইরাল জ্বর নিয়ে দশ হাজারের মতো বাসিন্দা আক্রান্ত। ডেঙ্গিতে মৃত্যুও ঘটেছে। যাদের দেহে ডেঙ্গি জীবাণু মেলেনি তারা কী ধরনের অসুখে আক্রান্ত তা নিয়ে অন্ধকারে চিকিৎসকরা।
গোটা উত্তরবঙ্গে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, উত্তর দিনাজপুুরে, এমনকি বালুরঘাটের মতো জেলাগুলোতেও এইএস, ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোগ নির্ধারণ এবং চিকিৎসার জন্য পুনের ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে রক্তের নমুনা পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সে কারণে উত্তরবঙ্গে এ ধরনের ল্যাবরেটরির কাজ দ্রুতার সঙ্গে করা উচিত বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy