Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড়-ডুয়ার্সে কমছে বেড়ানোর বুকিং-ও

কোনও হোটেল তড়ঘড়ি বসিয়েছে কার্ড সোয়াইপ মেশিন, কেউ আবার ডাউনলোড করেছে টাকা লেনদেনের অ্যাপ। তাতেও কিন্তু উত্তরে এ বার পর্যটকদের ভিড় নেই। রোজই চলছে বুকিং বাতিলের পর্ব। কারণ? সেই নোট বাতিল। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। কোনও হোটেল তড়ঘড়ি বসিয়েছে কার্ড সোয়াইপ মেশিন, কেউ আবার ডাউনলোড করেছে টাকা লেনদেনের অ্যাপ। তাতেও কিন্তু উত্তরে এ বার পর্যটকদের ভিড় নেই। রোজই চলছে বুকিং বাতিলের পর্ব। কারণ? সেই নোট বাতিল। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

শিলিগুড়িতে এক বিদেশি পর্যটক- ছবি: সন্দীপ পাল

শিলিগুড়িতে এক বিদেশি পর্যটক- ছবি: সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২১
Share: Save:

জমজমাট নয় দার্জিলিং

দার্জিলিঙের ম্যাল রোডের হোটেলের ১৯টি ঘরের মধ্যে বুকিং রয়েছে মাত্র ২টিতে। টাওয়ার রোডের হোটেলে ১২টি ঘরে পর্যটক রয়েছে মাত্র ৩টিতে। রবার্টসন রোডের হোটেলে এখন ৫টি ঘরে বুকিং রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে হোটেলে কোনও বুকিং নেই।

নভেম্বর খুব একটা জমজমাট থাকে না। কিন্তু এত খারাপও অবস্থা থাকে না পাহাড়ের। সব থেকে বড় কথা, একের পর এক বুকিং বাতিল হচ্ছে। ম্যাল রোডের হোটেলের ম্যানেজার দেবীপ্রসাদ সরকার টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখে নোট বাতিলের ঘোষণা শুনেছিলেন। পরদিন সকালেই তাঁর কাছে ফোন আসে কলকাতার এক পর্যটক দলের। ব্যাঙ্ক থেকে একলপ্তে টাকা তোলার বিধিনিষেধের জেরে পর্যটকরা বাড়ি ছেড়ে দূরে আসতে ভরসা পাচ্ছেন না।

এর ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বড়দিনের বুকিং নিয়ে। নভেম্বরে কিছু পর্যটক কমা-বাড়া নিয়ে পর্যটক ব্যবসায়ীরা বিশেষ চিন্তা করেন না। কিন্তু পরপর বুকিং বাতিলের ঘটনা তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। এই ধারা যদি বড়দিনেও বজায় থাকে, তা হলে পাহাড়ের পর্যটন শিল্পে সঙ্কট বাড়বে, মনে করছেন অনেকেই। আর সঙ্কট আসছে কি না, সেটা বোঝা যাবে এক সপ্তাহ পর থেকেই।

তার মধ্যে কি নোট নিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা শোধরাবে? পাহাড়ের এটিএমে লম্বা লাইনের দিকে তাকিয়ে সে ভরসাও পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

কুলিকে লোক কই

পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে, কিন্তু পর্যটকদের দেখা নেই। রায়গঞ্জের কুলিক পখিরালয়ে পর্যটকদের ভিড় কমেছে। এখানে রোজ গড়পরতা পাঁচশো পর্যটক আসেন। সে সংখ্যা এখন প্রায় অর্ধেক। শুধু কুলিক নয়, টিকিট বিক্রিতে মন্দা আদিনা হরিণ উদ্যানেও। শীতের শুরু থেকেই সেখানে ভিড় বাড়ে। আদিনা এবং গৌড়ে বন্যপ্রাণ এবং ঐতিহাসিক নির্দশন, এই দুইয়ের টানে ভিড় বাড়ে পর্যটকদের। এ বার শীতের শুরুতেই আদিনার টিকিট বিক্রিতে মন্দা। গত নভেম্বরের গোড়ায় প্রায় ৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল আদিনায়। এ বছর এখনও পর্যন্ত টিকিটি বিক্রি হয়েছে মোটে সাড়ে তিন হাজার। অর্থাৎ, পর্যটক কমেছে প্রায় আড়াই হাজার। যার সিংহভাগই নোট সঙ্কটের জেরে বলে দাবি করেছেন হরিণ উদ্যানের কর্মীরা।

গন্তব্য আদিনা হোক অথবা গৌড়, মালদহে রাত্রিবাস করা ছাড়া উপায় নেই। হোটেল-রিসর্ট-সরকারি অতিথি নিবাস— সব রয়েছে শহরে। এখানকার ৬৭টি হোটেলের মধ্যে অর্ধেকই এখন কিন্তু ফাঁকা। গৌড়ে এ বার কেমন লোক হচ্ছে? একটা আন্দাজ দিলেন এখানকার দোকানি বুবাই ঘোষ। বললেন, ‘‘দিনে দু-তিনশো টাকার বেশি বিক্রি নেই। গত বছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে দোকানে ঠাসা ভিড় ছিল।’’

কমছে বিদেশিও

দার্জিলিং পাহাড় তো বটেই সঙ্গে সিকিম, ডুয়ার্স বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের ২০১৫ সালের হিসাব অনুয়ায়ী, বিদেশি পর্যটকদের আসার সংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গ দেশের প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে ছয় নম্বর ছিল (বিদেশির সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৮০ হাজার)। কিন্তু নোট বাতিল আর সঙ্গে থাকা নানা শর্তের জেরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। পযর্টন দফতরের বক্তব্য, পর্যটকেরা দেশের বিভিন্ন এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে এ দেশে ঢোকার পর টাকা বদল করে নিতেন। মূলত সেখানে ৫০০-১০০০ টাকাই দেওয়া হত। ৮ নভেম্বরের পর মানি এক্সচেঞ্জের টাকার জোগান নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে টাকার রাখার পরিমাণ মাসে ৫ হাজার থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার করা হলেও টাকা ভাঙাতে পারছেন না বিদেশিরা। এক্সচেঞ্জ কাউন্টারগুলি ঠিকঠাক টাকা দিতে পারছে না। পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, পরিস্থিতি এমন চললে, বড়দিনে ঘোর বিপদ।

ব্যবসা কমছে ডুয়ার্সে

গরুমারা, চাপরামারি, জলদাপাড়ার জঙ্গলকে ঘিরে মূলত ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা চলে। লাটাগুড়ি, ধূপঝোড়া, মূর্তি এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে একাধিক সরকারি, বেসরকারি রিসর্ট। বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে জয়ন্তী, রায়ডাক, রায়মাটাং-ও সরকারি লজ, গেস্ট গাউস রয়েছে। লাটাগুড়িতেই ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে ৫০টির মত রিসর্ট। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে রিসর্টগুলি ২ লক্ষ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা অবধি মাসে রোজকার করে। এ বার নভেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে সোয়া লক্ষের কাছাকাছি। ধূপঝোড়া, মূর্তি এলাকায় ২৫টি’র মতো রিসর্ট রয়েছে। সেখানেও ব্যবসার হাল ভাল নয়। ব্যবসায়ীরা এখন আশঙ্কা করছেন, বড়দিন থেকে নতুন বছরের সময় বুকিং থাকলেও তা টাকার জোগানের সমস্যার জেরে বাতিল হতে পারে। তাই, সেই সময় ব্যবসা আরও কমে যাবে।

এই সময় নতুন বছর অবধি গরুমারার জঙ্গলে ৬০টির মতো সাফারি জিপসি চলে। সেই সংখ্যাটি এর মধ্যেই দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০টিতে। জয়ন্তী এলাকায় তো একাধিক জিপসিকে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যাচ্ছে। ১০০ টাকা কম, ৫০০-১০০০ টাকার নোট না থাকায় পর্যটকেরা অনেক সময় ঘুরতে এসেও সাফারি করছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Booking mountain areas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE