Advertisement
E-Paper

ডার্বির ঠেলায় হোটেলে দু’জনের ঘরে চার জন

অনেকটা ‘রথ দেখা কলা বেচার’ মত বারাসত থেকে শনিবার সকালে শিলিগুড়ি এসেছেন দীপ্তময় সেন। ক্লাস ফোর থেকে কট্টর মোহনবাগান সমর্থক, পেশায় বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়র দীপ্তময়ের দলবদলের সংখ্যা ১৫।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪০
মোহনবাগান সমর্থকদের হাতে মশাল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মোহনবাগান সমর্থকদের হাতে মশাল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

অনেকটা ‘রথ দেখা কলা বেচার’ মত বারাসত থেকে শনিবার সকালে শিলিগুড়ি এসেছেন দীপ্তময় সেন। ক্লাস ফোর থেকে কট্টর মোহনবাগান সমর্থক, পেশায় বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়র দীপ্তময়ের দলবদলের সংখ্যা ১৫। মাসতুতো ভাই থেকে পাড়ার দাদা দলে কে নেই!

রবিবারের বিকালে কাঞ্চনজঙ্ঘায় ডার্বি দেখাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। সঙ্গে যোগ করেছেন দুই দিনের শৈলশহর, দার্জিলিং সফর। উঠেছেন হাসমিচক লাগোয়া হোটেলে। দীপ্তময় বলেন, ‘‘আমরা প্রায় সকলেই চাকরি করি। মাস খানেক আগে থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি। খেলা তো দেখবই, সঙ্গে এক দফায় পাহাড়েও উঁকি মেরে যাওয়া। আজ, সোমবার সকালেই পাহাড়ে যাব। বুধবার লাজং ম্যাচটা দেখেই ট্রেনে উঠব।’’

একইরকম ভাবে বিধান রোডের একটি হোটেলে উঠেছিলেন, দক্ষিণ কলকাতা, হাওড়ার বাসিন্দা ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ৫০ জন। রবিবার সকালে শিলিগুড়ি পৌঁছে এক দফায় হংকং মার্কেট ঘুরেই দুপুর দুপুর ঢুকে পড়েছিলেন মাঠে।

বেহালার বাসিন্দা সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে দলের মাথাই বলা চলে! স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে মাথায় লাল হলুদ পতাকা আর মুখে রং তুলি বুলিয়ে নিয়েছিলেন। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘গত ২০১৬ সালের ডার্বিতে এই শহরে এসেছিলেন। সেবার ২০ জন মত ছিলাম। এ বার গোটা পাড়া এসে হাজির হয়েছিল। হোটেল তো পাচ্ছিলামই না। শেষে, এক পরিচিতের মাধ্যমে ঠেসঠুসে বিধানরোডে হোটেলে জায়গা পাই।’’

বিধান রোড, হিলকার্ট রোড শুধু নয়, সেবক রোড, হাকিমপাড়ার কিছু লজ, এনজেপি-র হোটেলে এদিন ছিল খেলা পাগলদের ভিড়ে ঠাসা। বেশিরভাগই রাতের দার্জিলিং মেল বা পদাতিক এক্সপ্রেস ধরে কলকাতা পৌঁছাচ্ছেন। অনেকে পাহাড়, ডুয়ার্স ঘুরেও ফিরছেন।

গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘পর্যটন মরসুম এখন তেমন নেই। ডার্বি-র ঠেলায় হোটেল ভরপুর। আমার নিজের হোটেলেই একটিও ঘর খালি ছিল না। অনেকে পাহাড়ে ঘুরে ফিরবেন বলে আগাম বুক করে গিয়েছেন।’’

পুলিশের নিয়মে হোটেলের একটি ডবল বেড রুমে ২ জনের বেশি অতিথি থাকার কথা নয়। কিন্তু ডার্বির উন্মাদনা অনেক হোটেলের ঘরেই ২ জনের বদলে ৩/৪ করেও থেকেছেন। স্টেডিয়াম লাগোয়া এলাকায় হোটেলে ঘর না পেয়ে জোরাজুরিতে এক রাতের জন্য মালিকেরাও তাঁদের না করতে পারেননি।

সেবক রোডের গেস্ট হাউসের এক মালিক জানান, ‘‘আমরা কোনও সময় নিয়ম ভাঙি না। কিন্তু অল্প বয়সী ছেলেগুলিকে এক রাতের জন্য না করা পারা যায়নি।’’ শহরের অন্তত ৬০টি হোটেল, লজ শনিবার, রবিবার কোনও ঘর খালি ছিল না। স্টে়ডিয়ামে খেলা দেখার ফাঁকে দুর্গাপুরের কয়েকজন যুবক জানান, ঘোরাঘুরির পর হাসিমচক লাগোয়া এলাকায় হোটেলের ঘর পান। কিন্তু ১ হাজার টাকার ঘর ৫০০ টাকা করে বেশি নিয়েছে। ডার্বির কথা ভেবে তাই দিয়েছি। নইলে তো এক রাস্তায় থাকতে হত।

হিলকার্ট রোডের একটি হোটেলের মালিক তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর বিনিময় মৌলিক বলেন, ‘‘আমার হোটেল এমনিতেই ভর্তি থাকে। এক সপ্তাহ আগে থেকে টেলিফোন করে কলকাতার একদল খেলা পাগল ঘর বুক করেছিল। ৭টি বড় ঘর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের দিয়েই ভর্তি ছিল।’’

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর ম্যাচ শেষ হতেই হোটেলের সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। অটো, টোটো থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে অনেকেই এনজেপি স্টেশনের দিকে কার্যত দৌড়তে দেখা যায়। যাঁরা থেকে গিয়েছে, তাদের হোটেলে খেয়ে সকালে জংশন বা এনজেপি স্ট্যান্ডের পাহাড়-ডুয়ার্সের গাড়ির খোঁজ করতে দেখা গিয়েছে। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, হঠাৎ করে যেন তিন দিনের পর্যটন মরশুম এসে গিয়েছে। হোটেলে ঘর নেই। পরপর দুটি খেলা দেখে পাহাড়, ডুয়ার্স ঘোরার জন্যও অনেকে এসেছেন। বছরে এমন খেলা ২/৩টি শহরে দরকার।

Derby match hotels
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy