E-Paper

ঝুঁকি, তবু ব্যবসা টাকার লোভে

এত খরচ করে গরু পাচারে তা হলে লাভ কোথায়? বিএসএফ সূত্রেই জানা যায়, বাংলাদেশে একটি গরু ভারতীয় টাকার হিসাবে নব্বই থেকে এক লক্ষে বিক্রি হয়। ভাল জাতের গরু হলে দাম আরও বেশি।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৬
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

কোচবিহারের গীতালদহ সীমান্তের কাছাকাছি একটি ছোট্ট ঘর বানিয়েছেন বিষ্ণু রায় (নাম পরিবর্তিত)। খাটাল-ঘর। সারিবদ্ধ ভাবে তাতে বেঁধে রাখা যাবে দশটি গরু। গরুর খাবারের জন্য কিছু খড় কেটে রাখা হয়েছে।

বিষ্ণু জানালেন, দিন-রাত মিলিয়ে চব্বিশ ঘন্টার জন্য একটি গরু রাখতে তিনি দু’হাজার টাকা নেন। বললেন, "ঝুঁকি তো অনেক। বিএসএফ-পুলিশ কেউ জানতে পারলে বিপদ হয়ে যাবে। তাতে দুই হাজারের নীচে নামা যায় না। আর এ ব্যবসা প্রতিদিন হয় না। কখনও বাজার মন্দা থাকে, কখনও ভাল।"

তখন সন্ধে নেমে আসছে। দূরে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি গরু নিয়ে আসছেন এক জন। পরনে লুঙ্গি, সাদা রঙের টি-শার্ট। হাতে বাঁশের ছোট লাঠি। কাঁধে ঝোলানো সাইড ব্যাগ। গরুগুলি নিয়ে তিনি সোজা ঢুকে গেলেন খাটালে। সেখানে গরু রেখে, নাম-পরিচয় গোপন করার শর্তে জানালেন, পেশায় 'ডাঙোয়াল'। একটি গরু খাটাল পর্যন্ত পৌঁছে দিলেই তাঁর কাজ শেষ। সে জন্য গরু পিছু তাঁর প্রাপ্য সাত হাজার টাকা। আর কোন রাস্তা দিয়ে তিনি নিরাপদে যেতে পারবেন, তার খেয়াল রাখে আগে আগে মোটরবাইক নিয়ে টহল দেওয়া 'লাইনম্যান'। যার পাওনা পাঁচ হাজার টাকা। অর্থাৎ, পাচার-রুটে একটি গরু খাটাল পর্যন্ত পৌঁছতেই খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। তার পরে পাচারের প্রধান দল রয়েছে। সে দলে রয়েছে সীমান্তের ‘দাগী’ দুষ্কৃতীরা। রাতের অন্ধকারে যারা বিএসএফের চোখে ধুলো দিয়ে গরু পৌঁছয় সীমান্তের অন্য পারে। তাদের 'রেট' আরও বেশি।

এত খরচ করে গরু পাচারে তা হলে লাভ কোথায়? বিএসএফ সূত্রেই জানা যায়, বাংলাদেশে একটি গরু ভারতীয় টাকার হিসাবে নব্বই থেকে এক লক্ষে বিক্রি হয়। ভাল জাতের গরু হলে দাম আরও বেশি। তাই সব খরচের পরেও পাচার-চক্রের ‘মাথার’ হাতে পৌঁছয় মোটা অঙ্কের টাকা। কোচবিহার জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, "গরু পাচার নিয়ে অনেক মামলা হয়েছে। প্রচুর গ্রেফতার হয়েছে। সীমান্তে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তার পরেও ঝুঁকি নিয়ে পাচার ওই টাকার জন্য।" যা স্বীকার করেন বিএসএফের এক কর্তাও। তাঁর কথায়, "সীমান্তে কড়া পাহারা চলে। আমরা সব রকম ভাবে চোরাকারবারিদের আটকাতে চেষ্টা করি। তার পরেও ওই কারবার পুরোপুরি বন্ধ করা যায় না।"

পুলিশ এবং বিএসএফ সূত্রের খবর, শীতের সময়ে পাচারকারীরা কুয়াশার আড়াল ব্যবহার করায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্ৰতি সপ্তাহে অন্তত পক্ষে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার অবৈধ কারবার হয় শুধু কোচবিহার লাগোয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে। শুধু গরু নয়, পাচারের তালিকায় আছে নেশার ট্যাবলেট, কাশির নিষিদ্ধ সিরাপ, চিনির মতো নানা জিনিস।

তদন্তকারী আধিকারিকদের সূত্রে খবর, নেশার জিনিস থেকে শুরু করে গরু আনা হয় ভিন‌্-রাজ্য থেকে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান থেকে ভাল জাতের গরু পৌঁছয় কোচবিহারে। সে সব চুপিসাড়ে নিয়ে যাওয়া হয় কোচবিহার ও অসম লাগোয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে। ধীরে ধীরে রাতের অন্ধকারে তা পাচার করা হয়। পাচারের টাকা রাতের অন্ধকারেই ‘প্রভাবশালীদের’ হাতে পৌঁছয় বলে অভিযোগ। তারা কারা? তা নিয়েও চলে গুঞ্জন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BSF Cooch Behar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy