বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিকে পিছনেই রেখেছিল জলপাইগুড়ি। এ বার নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এই জেলা গোটা রাজ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। গত শনি এবং রবিবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতার পরেই ছিল জলপাইগুড়ি। মৃত্যুতেও উত্তরবঙ্গের অন্য সব জেলার থেকে এগিয়ে জলপাইগুড়ি। কেন বাড়ছে সংক্রমণ, তা নিয়ে নানা মত থাকলেও পরিস্থিতি যে ক্রমশ আয়ত্তের বাইরে যাচ্ছে তা টের পাচ্ছে প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরও।
সোমবার জেলাশাসকের দফতরে প্রশাসন, পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আজ, মঙ্গলবার থেকে শহরে-গ্রামে পুলিশ এবং প্রশাসন যৌথ ভাবে ব্যাপক অভিযান চালাবে। জেলার কয়েকটি জনবহুল হাট-বাজার কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। জেলার সুপার স্প্রেডার অর্থাৎ যাঁদের থেকে বেশি লোকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের টিকাকরণ করা হবে এবং করোনা পরীক্ষাও বাড়াতে হবে। হঠাৎ করে কেন জলপাইগুড়ি জেলায় সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে দু’টি ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথমত, জেলার সর্বত্র বিধিনিষেধ যথাযথ মানা হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, জেলায় এখন সংক্রমণ ‘শিখরে’ (যাকে পরিভাষায় পিক বলা হয়) পৌঁছেছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার সময়ে এই জেলায় সংক্রমণ তুলনামূলক কম ছিল। দার্জিলিং, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের মতো উত্তরের জেলাগুলির থেকে কম ছিল জলপাইগুড়ির সংক্রমণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে জেলায়। ভোটের পরে কড়া বিধিনিষেধ জারির পরেও জেলায় সংক্রমণে লাগাম টানা যায়নি।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বলেন, “লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রথম দিকে জলপাইগুড়ির সংক্রমণ কম ছিল। হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে। হতে পারে, এখন জেলায় পিক অবস্থা চলছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের জানা যাচ্ছে কিছুটা হলেও নতুন সংক্রমণ কমতির দিকে। দেখা যাক, আমরা সংক্রমণ রোখার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছি।”
এ দিন প্রশাসনের বৈঠকে বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ ওঠে। ময়নাগুড়ির একটি হাটে ব্যাপক জমায়েত হচ্ছে। সেই হাটটি বন্ধ করে দিতে পারে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি শহরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আনাজের বাজার-সহ প্রায় সব দোকান খোলা থাকছে। সব দোকানের ট্রেড লাইসেন্স চেক করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। জেলার সব বাজারে স্যানিটাইজ়ার ছড়ানো হবে বলে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন বাজারে কবে স্যানিটাইজ়ার ছড়ানো হচ্ছে তার একটি ক্যালেন্ডার তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন জেলাশাসক।
জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিধিনিষেধ আরও কঠোর ভাবে মানার প্রয়োজন রয়েছে। সে কারণে আগামিকাল থেকে কড়া অভিযান হবে। যে ভাবেই হোক সংক্রমণ কমাতে হবে।” জেলার পুরসভাগুলির মধ্যে সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে জলপাইগুড়ি শহরও।