Advertisement
E-Paper

পশলা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন রাস্তা

বয়স বেড়েছে শহরের, বেড়েছে পরিধিও। কিন্তু রাজার শহরের সেই উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা যেন ক্রমশ তলানিতে পৌঁছচ্ছে। ফি বছর পশলা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে গোটা কোচবিহার। গত জুনে গ্রীষ্মের ভরা মরসুমে এক রাতের বৃষ্টিতেও সেই জলছবি দেখেছেন বাসিন্দারা। শহরের কোথাও জলস্রোতে রাস্তা ছোটখাটো নদীর চেহারা নিয়েছিল, কোথাও আবার বড় জলাশয়। শহরের ঐতিহ্য খোদ রাজবাড়ির সামনের কেশব রোড হয়ে ওঠে জল থইথই।

অরিন্দম সাহা ও নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:৩০
শহরের রাস্তায় বেহাল জল নিকাশি ব্যবস্থা। নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না দীর্ঘ দিন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

শহরের রাস্তায় বেহাল জল নিকাশি ব্যবস্থা। নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না দীর্ঘ দিন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

বয়স বেড়েছে শহরের, বেড়েছে পরিধিও। কিন্তু রাজার শহরের সেই উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা যেন ক্রমশ তলানিতে পৌঁছচ্ছে। ফি বছর পশলা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে গোটা কোচবিহার। গত জুনে গ্রীষ্মের ভরা মরসুমে এক রাতের বৃষ্টিতেও সেই জলছবি দেখেছেন বাসিন্দারা। শহরের কোথাও জলস্রোতে রাস্তা ছোটখাটো নদীর চেহারা নিয়েছিল, কোথাও আবার বড় জলাশয়। শহরের ঐতিহ্য খোদ রাজবাড়ির সামনের কেশব রোড হয়ে ওঠে জল থইথই।

বাসিন্দারা জানান, রাজ আমলে কোচবিহার শহরে নিকাশি ছিল উন্নত। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় কাঁচা নিকাশি নালা ছিল। বিশালাকার একটি হাইড্রেনও সে সময় তৈরি হয়েছিল। বিবেকানন্দ স্ট্রিট হয়ে যে হাইড্রেনটি মরা তোর্সায় মিশেছে। শহরের প্রবীণ বাসিন্দা তথা কোচবিহার রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সী অমিয় দেববক্সী বলেন, “রাজার আমলে নিকাশি নালা বেশির ভাগ ছিল কাঁচা। একটি হাইড্রেন তৈরি হয়েছিল। সে সব নিয়মিত সাফাই হতো। ফলে রাস্তায় সে ভাবে জল দাঁড়াত না।”

কোচবিহার শহরের নিকাশির কী হাল এখন? শহরের ২০টি ওয়ার্ডের বহু এলাকাতেও ভারী বৃষ্টিতেই কমবেশি জল দাঁড়িয়ে যায়। রাজবাড়ি সংলগ্ন কেশব রোড, নিউ কদমতলা, বাদুড় বাগান, সুভাষপল্লি, সিলভার জুবিলি রোড, প্রিয়গঞ্জ কলোনি, শান্তিনগর, বাঘাযতীন সরণি, স্টেশন রোড, নতুন বাজার, গাঁধীনগর, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া, নৃপেণ সরণী, কলাবাগান সর্বত্র এ বারের গ্রীষ্মের মরসুমের বৃষ্টিতেও দীর্ঘ ক্ষণ জল জমে ছিল। অভিযোগ, শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বসতবাড়ি। কিন্তু সুষ্ঠু নিকাশির মাস্টার প্ল্যান এত দিনেও তৈরি হয়নি। যে সব নর্দমা রয়েছে তার বেশির ভাগ নিয়মিত সাফাই হয় না। আবর্জনায় নর্দমার মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজবাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে হাজরাপাড়ার মতো বিভিন্ন এলাকায়। সুভাষপল্লি থেকে রেল গুমটি এলাকা জুড়েও প্রায় এক ছবি। কোচবিহার পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহানন্দ সাহা বলেন, “নিকাশির উন্নয়নে পুরসভার কোনও পরিকল্পনাই নেই। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ বার তো গ্রীষ্মের মরসুমেই গোটা শহর জল থইথই চেহারা নিয়েছিল। ফলে ভরা বর্ষায় ভোগান্তি বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই।”

বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “কোচবিহার এখন জলের শহর। বৃষ্টি সামান্য বেশি হলেই রাস্তা ডুবছে। নিকাশি উপচে নোংরায় ভাসছে বাড়ির উঠোন। পুরসভা উদাসীন।”

পুরসভার অবশ্য দাবি, খাগরাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বালাপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সুভাষপল্লি ও লাগোয়া এলাকার ২, ৩, ৫, ৬-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের জল মরা তোর্সায় ঢুকতে পারছে না। ওই সমস্যার কথা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। সমস্ত ওয়ার্ডেই নিয়মিত ভাবে নর্দমা সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন হাইড্রেন তৈরির কাজও শেষের মুখে। নিকাশির হাল ফেরানোর ব্যাপারে চেষ্টার খামতি নেই। পুরসভার চেয়ারপার্সন রেবা কুণ্ডু বলেন, “পুরসভা সাধ্য মতো কাজ করছে। হাইড্রেনের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে। এ ছাড়াও কী পরিকল্পনা নেওয়া যায় সে সব নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। আমরা বসে নেই।”

নিকাশির বেহাল দশা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসনের কর্তারা। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “আগামী ২৫ বছরের কথা মাথায় রেখে নিকাশী উন্নয়নের ব্যাপারে পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্প তৈরির ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।”

Drainage system Cooch Behar rain Vivekananda street rajbari municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy