Advertisement
E-Paper

ধর্মঘটে পর্যটকদের ভোগান্তি এড়ানো গেল না পুরোপুরি

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনের সামনে সিটি অটো ও সরকারি বাসের চলাচল দেখে এক মুহূর্তে মনে হয়েছিল যেন জনজীবন স্বাভাবিকই। কিন্তু স্টেশন ছেড়ে কিছুটা এগোতেই বন্‌ধের ছবি প্রকট হয়। অধিকাংশ দোকান-বাজার ছিল বন্ধ। তবে এনজেপি স্টেশনে এ দিন পর্যটক বা যাত্রীদের পদে পদে নাকাল হওয়ার চেনা ছবিটা নজরে আসেনি।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:৪৬
শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ে বিপাকে পর্যটকেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ে বিপাকে পর্যটকেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনের সামনে সিটি অটো ও সরকারি বাসের চলাচল দেখে এক মুহূর্তে মনে হয়েছিল যেন জনজীবন স্বাভাবিকই। কিন্তু স্টেশন ছেড়ে কিছুটা এগোতেই বন্‌ধের ছবি প্রকট হয়। অধিকাংশ দোকান-বাজার ছিল বন্ধ। তবে এনজেপি স্টেশনে এ দিন পর্যটক বা যাত্রীদের পদে পদে নাকাল হওয়ার চেনা ছবিটা নজরে আসেনি। এনজেপি থেকে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য সরকারি বাস চলাচল করে। এ দিন সেই বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছিল বলে এনবিএসটিসি জানিয়েছে। স্টেশনের সামনের স্ট্যান্ডে সিটি অটো, অটোও দেখা গিয়েছে। স্টেশনের সামনের প্রিপেড ট্যাক্সি বুথেও এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকদের ভিড় দেখা গিয়েছে। বুথের হিসেবে এ দিন বিকেল পর্যন্ত ১৩৮টি গাড়ি ভাড়া হয়েছে। তবে অন্য দিনের থেকে এ দিন গাড়ির চাহিদা কিছুটা কম ছিল বলে জানানো হয়েছে।

কলকাতার নাকতলা থেকে ডুয়ার্সে বেড়াতে এসেছেন ফাল্গুনী দাশগুপ্ত। ডুয়ার্সের রিসর্ট-বাংলো সবই আগে থেকে ‘বুক’ করা ছিল তাঁর। এনজেপি থেকে লাটাগুড়ি যাওয়ার জন্য একটি গাড়িও বলে রেখেছিলেন। যদিও এ দিন স্টেশনে নেমে তিনি জানতে পারেন, বনধের কারণে সেই গাড়ি আসছে না। শেষে প্রিপেড বুথ থেকে গাড়ি ভাড়া করে ডুয়ার্সের দিকে রওনা দেন তাঁরা। ফাল্গুনী দেবীর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে বনধে প্রিপেড বুথগুলিও বন্ধ থাকে। তেমন হলে আমাদের একটা দিন পণ্ড হয়ে যেতে পারত।’’ তবে পর্যটকদের দুর্ভোগ যে পুরোপুরি আটকানো গিয়েছে তেমনও নয়। কাউকে পরিবার নিয়ে দিনভর কাটাতে দেখা গিয়েছে স্টেশন চত্বরে। ঝুঁকি না নিয়ে কেউ আবার গোটা দিনের ‘ট্যুর প্ল্যান’ বাতিল করে দিয়েছেন।

শিলিগুড়ি জংশন, দার্জিলিং মোড় এলাকা থেকে দার্জিলিঙের গাড়ি পেতে পর্যটকদের এ দিন বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। বনধ সমর্থন করা এবং পাল্টা প্রতিরোধ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি তরজা চালিয়ে যাওয়ায় আগে থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। সে কারণেই বনধের দিন পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেই আশঙ্কা করে অনেক গাড়ির চালক-ই আগেভাগেই সমস্ত বুকিং বাতিল করে দিয়েছিলেন। তাতেও নাকাল হতে হয়েছে পর্যটকদের। ৭৫ জনের একটি দল নিয়ে গ্যাংটক বেড়াতে গিয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ দত্ত। বন্‌ধের কারণে সকালের পরে শিলিগুড়িতে গাড়ি ঢুকবে না বলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই বৃহস্পতিবার গ্যাংটক থেকে রওনা দিয়েছেন সকলে। সকাল আটটা নাগাদ এনজেপি পৌঁছে, দিনভর কাটাতে হয়েছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।

এ দিনের সব পরিকল্পনাই বাতিল করতে হয়েছে নিউ ব্যরাকপুরের বাদল পাল, পাঁচুগোপাল চৌধুরীদের। দার্জিলিং থেকে সব বুকিং বাতিল করে ভোররাতে এনজেপি পৌঁছেছেন তাঁরা। সঙ্গে মহিলা এবং একাধিক শিশুও ছিল। চড়া রোদে স্টেশনে সকলেই ঘেমেনেয়ে অস্থির। ছোটরা কান্নাকাটিও জুড়ে দেয়। বাদলবাবুর কথায়, ‘‘কী আর করব? দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’’

দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পাননি সরকারি কর্মী থেকে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করা নিত্যযাত্রী, সাধারণ বাসিন্দারাও। সরকারি নির্দেশে মাটিগাড়া থেকে সদর মহকুমা শাসকের দফতরে মানব বন্ধনে যোগ দিতে এসেছিলেন মালতি ভট্টাচার্য (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সকালে কিছু বাস চললেও, দুপুরের পর রাস্তায় সরকারি বাস খুবই কম ছিল।’’

এ দিন সকাল থেকে সরকারি নির্দেশ মতো রাস্তায় সরকারি বাস নামলেও, চাহিদার তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল। বেসরকারি বাস না থাকায় নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, বিধাননগর, ফাঁসিদেওয়া, পানিট্যাঙ্কি যাওয়ার সরকারি বাসের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে নিত্যযাত্রী থেকে বাসিন্দাদের। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বিভাগীয় ম্যানেজার বিকাশ দাস জানিয়েছেন, প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে দেড়শো বাস চললেও, এ দিন অতিরিক্ত ২০টির বেশি বাস চালানো হয়েছে। পানিট্যাঙ্কিতেও দুপুরের পরে অতিরিক্ত বাস চলেছে।

অন্যদিকে, বনধের ডাক দেওয়া সংগঠনগুলির তরফে সিটুর দার্জিলিং জেলা সাধারণ সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। যে ভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বন্‌ধ ছাড়া কোনও পথ ছিল না। পরিবহণ শ্রমিকরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে বনধ পালন করেছেন।’’

বাগডোগরা বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য দিনভর খাবারের ব্যবস্থা থাকায় পর্যটক ও যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। বিমানবন্দরের প্রিপেড ট্যাক্সি বুথও খোলা ছিল। এ দিন বাগডোগরায় ১৪টি বিমান ওঠানামা করেছে।

siliguri general strike tourists suffered strike suffered tourists north bengal tourists anirban roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy