নীলপাখি উড়ে এসে বসছে বিভিন্ন ‘ঠেকে,’ নীলপাখি ধরতে ফাঁদ পাতছে পুলিশ। জলপাইগুড়ির শহর এলাকাগুলিতে ইদানীং ডানা মেলেছে নীলপাখি। নীলপাখির সঙ্গী হচ্ছে ‘রথের চাকা’, পিঙ্কি, চকলেট বা কখনও পাউডার। জলপাইগুড়ি শহর থেকে শুরু করে মালবাজার, ধূপগুড়িতে এমন সাঙ্কেতিক শব্দে মাদকের কারবার রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ।
জলপাইগুড়ির চা বলয়ে কারবার চলছে ‘জুসে’র। শহর এলাকায় মাদক চক্রের ছড়িয়ে থাকা নতুন কোনও অভিযোগ নয়, তবে জেলার চা বলয়ে যে ভাবে মাদকের নেশা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সর্বস্তরে। সম্প্রতি চা বলয়ের ডামডিম এলাকার থেকে বিপুল গাঁজা উদ্ধার হয়। ডামডিম থেকে নেশার ওষুধ বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ওদলাবাড়ি মোড়ের ৩১ জাতীয় সড়কের পাশেই একটি ওষুধের দোকান থেকে বিপুল পরিমাণে নেশার ওষুধ বাজেয়াপ্ত হয়। চালসাতেও অল্প পরিমাণে হেরোইন উদ্ধার হয়েছে। রাজ্য আবগারি দফতরকেও অভিযানে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খণ্ডবহালে বলেন, “স্কুলের প্রার্থনায় সচেতনতা করা হচ্ছে, স্কুল-কলেজে নানা মাদক বিরোধী প্রচার চলছে। সেই সঙ্গে ওষুধের দোকানগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে শুরু করে লাগাতার অভিযান চলছে।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, পুলিশের চোখে ধূলো দিতে কমবয়সীদের ‘হ্যান্ডলার’ বানিয়েছে মাদক কারবারীরা। অভিজাত এলাকায় কোনও বাড়িতে মাদক মজুত করা হচ্ছে যাতে পুলিশের সন্দেহ না হয়। সেখান থেকে মাদক কমবয়সীদের হাত দিয়ে পাঠানো হচ্ছে গ্রাহকের কাছে। হ্যান্ডলার কমিশন পাচ্ছে মাদক। সেই কমিশন পাওয়া মাদক কমবয়সী হ্যান্ডলাররা নিজেরা সেবন করছে এবং কিছুটা বিক্রি করছে।
এই চক্রে কয়েকজন প্রভাবশালীদের নামও শোনা যায় বলে অভিযোগ। তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক মহলের যোগাযোগও রয়েছে। পুলিশ হানা দিয়ে কাউকে গ্রেফতার করলে প্রভাবশালী মহল থেকে ফোনও চলে আসে বলে বলে পুলিশের একাংশের দাবি।
পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, সম্প্রতি বাড়বাড়ন্ত হয়েছে হেরোইনের। যার সাঙ্কেতিক নাম পাউডার বা চকোলেট। জলপাইগুড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে যুবক যুবতীদের ভরা আড্ডায় কার কাছে কতো চকোলেট বা পাউডার রয়েছে তা নিয়ে জোর তর্ক বা আলোচনা চলছে। হেরোইন ছাড়াও ব্যথার ওষুধ যা গর্ভধারণের যন্ত্রণা উপশমে দেওয়া হয় সেগুলিকেও মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধের পোশাকি নাম নীলপাখি। আক্রমনাত্মক বা অশান্ত মানসিক রোগীদের ঘুম পাড়াতে ব্যবহার হয় কড়া ডোজের গোলাকৃতি ওষুধ। গোলাকারের জন্য এই ওষুধের সাঙ্কেতিক নাম রথের চাকা অথবা চাকা।
সম্প্রতি জলপাইগুড়ির এক সভ্রান্ত পরিবারের মেয়কে পেটের চিকিৎসায় হায়দ্রাবাদে নেওয়া হয়। তার শরীরে অত্যন্ত কড়া মাদক নিয়মিত সেবনের প্রমাণ মেনে। পরে ছাত্রীটি স্বীকার করে, স্কুলের কয়েকজন সহপাঠিনীর সঙ্গে সেও নিয়মমিত বিভিন্ন জনকে মাদক পৌঁছে দিত, তার বিনিময়ে ‘কমিশন’ পেত মাদকই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)