Advertisement
E-Paper

কম্পনে কাটল ভোটের সুর

ভোটের বাজারে ফের ভূমিকম্পে কাঁপল উত্তরবঙ্গ। ফিরে এল পুরনো আতঙ্কও। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’বার ঝাঁকুনির পরে গোটা শিলিগুড়ি যেন পথে নেমে যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১২
ভূমিকম্পের আতঙ্কে পালাতে গিয়ে আহত এক বাসিন্দাকে আনা হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

ভূমিকম্পের আতঙ্কে পালাতে গিয়ে আহত এক বাসিন্দাকে আনা হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

ভোটের বাজারে ফের ভূমিকম্পে কাঁপল উত্তরবঙ্গ। ফিরে এল পুরনো আতঙ্কও। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’বার ঝাঁকুনির পরে গোটা শিলিগুড়ি যেন পথে নেমে যায়। শিলিগুড়িতে ভূমিকম্পের সময়ে পড়ে ৩ জন জখম হয়েছেন। ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়েছে ১ কিশোরীর সহ ৩ জনের। তাঁরা শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শহরের মনে পড়ে গিয়েছে, গত বছর এপ্রিলে পুরভোটের সময়ের ভূমিকম্পের কথা। এক প্রার্থীর কথায়, ‘‘এমনিতেই বাসিন্দারা কম্পনের আতঙ্কে রয়েছে। এখন ভোট চাইতে যাওয়া মোটেই মানবিক নয়। উল্টে ভোট হারানোর ভয় রয়েছে।’’ উত্তরবঙ্গের নানা জেলায় ভোটপ্রার্থীদের কী ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

কাঁপছে বুঝিনি দিনভর প্রচার সেরে সবে বাড়ি ফিরেছেন কার্শিয়াঙে মোর্চার প্রার্থী রোহিত শর্মা। সবে সোফায় গা এলিয়েছেন। কাঁপুনি টের পেলেও তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর পা কাঁপছে। রোহিতবাবুর কথায়, ‘‘সকলের চেঁচামেচি শুনে বুঝতে পারি, ভূমিকম্প হয়েছে।’’ রোহিতবাবুর প্রতিপক্ষ তৃণমূলের প্রার্থী শান্তা ছেত্রী তখন পদযাত্রা করছিলেন। তিনিও অল্প দুলুনি টের পান। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর যা হয়েছিল, তার তুলনায় কিন্তু কিছুই হয়নি।’’

দাদা নামুন মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন জলপাইগুড়ির কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা। মাইক কাঁপছে সেটা টেরও পেয়েছিলেন। তবে ভূমিকম্প হচ্ছে, তা বুঝতে পারেননি। হঠাৎই আশেপাশে চেঁচামেচি শোনেন। তবে ভাষণ থামাননি। মঞ্চে প্রার্থীকে দেখে নেতা-কর্মীরা বলতে থাকেন, ‘‘দাদা, নামুন বক্তৃতা পরে হবে।’’ সুখবিলাসবাবু বলেন, ‘‘তাই নেমেই পড়লাম।” জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ধর্তিমোহন রায় মোহিতনগরে একটি জনসভা সেরে জলপাইগুড়ি দেশবন্ধুনগর স্কুলের কাছে একটি সভায় আসছিলেন। তিনি বলেন, “মাটি কাঁপছে বুঝতে পেরে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। ভুমিকম্প থেমে গেলে সভার যাই।”

পিচের পাশে অশোক

ভূমিকম্পের সময় শিলিগুড়ির বাম জোট প্রার্থী অশোক ভট্টচার্য হাকিমপাড়ার অগ্রগামী ক্লাবের ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে দেথা করতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন চিৎকার করে ওঠায় বিষয়টি টের পান। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সবাই সামনে খোলা মাঠে বার হয়ে আসি। কিছু ক্ষণের মধ্যে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। চারদিকে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি।’’ তিনি তো মেয়রও বটে।

অকুতোভয় শঙ্কর মাটিগাড়া ব্লকের পাথরঘাটার মোটাজোতে সভা করছিলেন মাটিগাড়া নকশালবাড়ি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকার। হঠাৎ মাইক কেঁপে উঠল। চার দিকে লোকজন কেমন যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। অনেকে চিৎকারও করলেন। মাইকে তিনি বললেন, ‘‘খোলা মাঠে সভা করছি। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে খোলা মাঠে রয়েছেন। চিন্তার কোনও কিছু নেই। মাটি ফেটে না গেলে বিপদ হবে না।’’

ইসকন মন্দিরে রথীন প্রচারের ফাঁকে সন্ধ্যায় ইসকন মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রথীন বসু। মন্দিরের সিড়িতেই ছিলাম। চারদিক কেঁপে উঠল। লোকজন, ভক্তরা ভয়ে অনেকে চিৎকারও জুড়ে দেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়। খোঁজ নিয়ে তখনই জানলাম, বড় মাপের তেমন ক্ষয়ক্ষতি এদিকে হয়নি। মন্দিরে আবার প্রণাম করি।

বাজার কাঁপিয়ে চাঁচল বাজারে প্রচার চালাচ্ছিলেন বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রাম। আচমকাই বাড়ি ছেড়ে আতঙ্কিত লোকজনকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখে প্রথমে হতচকিত হয়ে যান। ধাতস্থ হয়ে কয়েকজন বাসিন্দাদের রসিকতা, ‘‘বাজার তো কাঁপিয়ে দিলেন মশাই।’’ দীপঙ্করবাবু বললেন, ‘‘রাস্তায় থাকায় ভূমিকম্প ঠিক বুঝতে পারিনি! ।’’

চেঁচালেন দিলীপ ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএম নেতা প্রার্থী দিলীপ সিংহ দশরথপল্লিতে অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ের ঘরে বসে বৈঠক করছিলেন। ভূমিকম্প হতেই লোকজন হুড়োহুড়ি করে বার হতে থাকে। মহিলারা উলু দেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘চেঁচিয়ে বলি, দৌড়ঝাঁপ করবেন না। ধীরে সুস্থে বার হন। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’’

বক্তৃতা থামেনি সৌরভ চক্রবর্তী ভূমিকম্পের সময় আলিপুরদুয়ার জংশন লাগোয়া চেঁচাখাতা এলাকায় প্রচার করছিলেন। তিনি জানান, প্রচারে ব্যস্ত থাকায় বুঝতে পারিনি। পরে লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে দেখে টের পাই। তাঁর প্রতিপক্ষ জোট প্রার্থী কংগ্রেসের বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় একটি সভায় বলছিলাম। তেমন বড় কিছু নয়। বক্তৃতা থামাতে হয়নি।’’

টের পাননি সোহমরা রায়গঞ্জ শহরে টলিউড তারকা সোহম চক্রবর্তীর সঙ্গে রোড শো করছিলেন তৃণমূল প্রার্থী পূর্ণেন্দু দে। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা কেউই ভূমিকম্প টের পাইনি। পরে বাসিন্দাদের মুখে মুখে ভূমিকম্পের কথা রটে যায়। অনেকেই আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে প্রচারে বিঘ্ন ঘটেনি।’’

আর্জি মোহিতের ভূমিকম্পের সময় রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত মাড়াইকুড়া এলাকায় কর্মিসভা করছিলেন। খোলা জায়গায় হওয়ায় তিনি বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেন। মোহিতবাবু জানান, ভূমিকম্পের সময়ে সবাইকে মাথা ঠান্ডা রেখে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করি।

ভেবেছিলেন রসিকতা কালিম্পঙে পার্টি অফিসে মিটিং করছিলেন তৃণমূল সমর্থিত জন আন্দোলন পার্টির প্রার্থী হরকাবাহাদুর ছেত্রী। কয়েকজন অনুগামী চেঁচিয়ে ওঠেন, ভূমিকম্প! হরকাবাহাদুর বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম রসিকতা। বললাম, মোর্চা কাঁপছে মনে হচ্ছে। পরে বুঝলাম সত্যিই ভূমিকম্প। তখন সকলে মিলে বাইরে বার হলাম।’’

Earthquake Election Campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy