Advertisement
E-Paper

মাটি কেঁপে উঠতেই বিরোধ ভুলে গিয়ে হাতে হাত যুযুধানদের

আপনি বাঁচলে পার্টির নাম! শিলিগুড়ির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিলেন চার জন। ভূমিকম্প টের পেয়ে সকলেই এক ছুটে ঘর থেকে সোজা ওই মাঠে। মাটি কাঁপা বন্ধ হচ্ছিল না। এক তৃণমূলকর্মীকে দেখা গেল সিপিএম কর্মীর হাত জড়িয়ে টাল সামলাচ্ছেন। কংগ্রেস কর্মীকে দেখা গেল নির্দলের অনুগামীকে প্রায় বুকে আঁকড়ে নিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২২

আপনি বাঁচলে পার্টির নাম!

শিলিগুড়ির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিলেন চার জন। ভূমিকম্প টের পেয়ে সকলেই এক ছুটে ঘর থেকে সোজা ওই মাঠে। মাটি কাঁপা বন্ধ হচ্ছিল না। এক তৃণমূলকর্মীকে দেখা গেল সিপিএম কর্মীর হাত জড়িয়ে টাল সামলাচ্ছেন। কংগ্রেস কর্মীকে দেখা গেল নির্দলের অনুগামীকে প্রায় বুকে আঁকড়ে নিয়েছেন।

ভূমিকম্প থামতে কয়েক জনের চিৎকার, ‘‘দাদা তাড়াতাড়ি ভিতরে যান। ইভিএম ফাঁকা পড়ে আছে! পার্টির ক্ষতি হয়ে যেতে পারে!’’ সে কথা শুনে প্রচণ্ড চটলেন ওই চারজনই। প্রায় এক সুরে তাঁদের দাবড়ানি, ‘‘থাম ছোঁড়া! স্কুলের ছাদ ভেঙে পড়লে সকলেই মরব। উনি এখন পার্টির জন্য ভাবছেন। আরে আপনি বাঁচলে পার্টির নাম, বুঝলি!’’

শুধু শিলিগুড়ি নয়, শনিবার ভূমিকম্প-কবলিত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার পোলিং বুথে এমনই ‘মিলেমিশে’ থাকার ছবি দেখা গিয়েছে ভোটে যুযুধান সব দলের নেতা-কর্মীদের। এক জনের মোবাইলে নেটওয়ার্ক মিলছে না দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করে খবরাখবর নিয়েছেন। মালবাজার পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী দীপা সরকার, বিজেপির সঙ্গীতা দাস এবং আরএসপির মিঠু ঘোষরা ভূমিকম্পের পরেও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। দীপাদেবী , সঙ্গীতাদেবীদের কথায়, ‘‘দু’বার ভূমিকম্পের পরে একটু হলেও আতঙ্কে ভুগছি। তাই এক সঙ্গে থেকে সাহস বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’’ দীপাদেবীদের মতোই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে দাপুটে সব নেতার চেহারাই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল! অন্তত, প্রত্যক্ষদর্শীরা তা-ই বলছেন। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে প্রথমে ভেবেছিলেন তাঁর মাথা ঘুরছে। পরে টের পান ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের সময় শিলিগুড়ি পুরভোটের পর্যবেক্ষক অবনীন্দ্র সিংহ সার্কিট হাউসে টিফিন করছিলেন। তিনি জানান, প্রথমে ভেবেছিলেন কোনও বড় গাড়ি যাচ্ছে। পরে টের পেয়ে দৌড়ে ফাঁকা জায়গায় বেরিয়ে আসেন। আতঙ্কে ভুগতে থাকেন নির্বাচন দফতরের অনেক কর্মী।

পুলিশ-প্রশাসনের অবস্থাও কম করুণ হয়নি। ভূমিকম্পের সময়ে অনেক জায়গাতেই হুড়োহুড়ি করে ভোটের লাইন ছেড়ে পালান প্রায় সব ভোটার। পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীরা কী করবেন বুঝতে না পেরে এ-দিক ও-দিক তাকাচ্ছিলেন। সেই সময়ে দেখা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররাও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প ছুটছেন। তাঁদের দেখাদেখি নিচুতলার পুলিশকর্মীরাও দ্রুত সরতে দেরি করেননি। এমনকী,
আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা প্রথমে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল শক্ত করে ধরে পর মুহূর্তে ব্যাপার বুঝে নিজেরাও সর্বত্র বুথ লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। বিএসএফ জওয়ানদের কয়েকজন জানান, ভূমিকম্প হচ্ছে সেটা তাঁরা প্রথমে বুঝতে পারেননি। ভূমিকম্প মিটে যাওয়ার পরে ভোটারদের লাইনে ঠিকমতো দাঁড় করাতে নাকাল হয় পুলিশ।

দু’বার ভূমিকম্পের পরে বহু জায়গায় ভোটকেন্দ্রের ভিতরে টানা বসে কাজ করতে রাজি হচ্ছিলেন না অনেক পোলিং এজেন্টই। কেউ ঘামছিলেন। কেউ বাইরে গিয়ে ঘনঘন জল খাচ্ছিলেন। কেউ আবার বেরিয়ে বাড়িতে ফোন করছিলেন। সেই কারণে, নানা দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে বারেবারে লোক পাঠিয়ে পোলিং এজেন্টদের ভেতরে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু নানা বুথের ভাঙাচোরা দশা দেখে তাঁদের আতঙ্ক কাটতে চায়নি। তাঁরা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। কয়েকজনকে চেঁচিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘ছাদ-দেওয়াল ভেঙে চাপ পড়লে কী দল বাঁচাতে পারবে? দলের কথা পুলিশ-প্রশাসন কিংবা আর পাঁচজন শুনতে পারে, ভূমিকম্প তো আটকানো যাবে না। প্রকৃতি কোনও দাদ-দিদির কথা শোনে না। কাজেই আগে নিজে বাঁচার রাস্তাটা নিশ্চিত করি। ধাতস্থ হই। তার পরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকব।’’

শেষ পর্যন্ত অনেক নেতাই ‘বাবা-বাছা’ করে পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে পাঠান। ভোট-পর্ব নির্বিঘ্নে মেটে।

Earthquake hit polling booth siliguri polling booth siliguri corporation election 2015 siliguri 6 no ward
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy