আতঙ্ক: সিলিন্ডার নিয়ে ঘর থেকে বেরোচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
কেউ ঘাড়ে করে বাড়ির রান্নার সিলিন্ডার বার করে ছুটছেন ফাঁকা মাঠের দিকে। কোনও বাড়ির মহিলা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার রান্নাঘর থেকে বার করে নিয়ে যাচ্ছেন মাঠের কাছে পুকুর ধারে। সকলেই দিশেহারা। কেউ চিৎকার করছেন। কেউ হায় হায় করছেন। রায়গঞ্জ শহরের মিলনপাড়ার মাঠ পুকুরের ধার তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার।
প্রতিবেশী ভবেশ দাসের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড এবং তাঁদের ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুনের ভয়াবহ আকার নেওয়ার ঘটনা চোখের সামনে দেখে এমনই আতঙ্ক হতবাক হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। ঘটনার সময় প্রচণ্ড শব্দে দু’টো গ্যাস সিলিন্ডার ফাটতে দেখে আশেপাশের বাড়ির বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁদের ভয় হচ্ছিল, তাঁদের বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারও বুঝি যখনতখন ফেটে যাবে। আগুন কোনও কারণে ছড়ালে তাঁদের ঘরবাড়িও পুড়ে খাক হয়ে যাবে। সেই কারণে ভবেশের বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন ছড়িয়েছে দেখে বাসিন্দারা, বিশেষ করে মহিলারা দলে দলে নিজেদের বাড়ির সিলিন্ডার বাড়ি থেকে বার করে লাগোয়া মাঠে এবং পুকুরের পাড়ে নিয়ে যান। টুম্পা দত্ত, মিনা দাস, সুলেখা রায়েরা পুকুর পাড়ে, লাগোয়া মাঠে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার রেখে আগলে বসেছিলেন। চোখে মুখে সকলেরই আতঙ্ক।
ঘটনার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ভবেশদের বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন করছিলেন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা। ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় মাঠ থেকে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ফের বাড়িতে নিয়ে আসেন অনেকে। আচমকা বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফূলিঙ্গ ছড়ালে এবং ধোঁয়া বার হলে ফের দৌড়ঝাঁপ এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। ফের বাড়ি থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বার করে পুকুরের ধারে মাঠে জড়ো করা শুরু হয়। পরে পুলিশ এবং দমকলের কর্মীরা আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
দমকলের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক শান্তনু সিংহ বলেন, ‘‘গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন ছড়িয়েছে। তবে কী ভাবে লাগল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’’
ঘটনাস্থলে পুলিশ, দমকল ছাড়া পুরসভার কর্মীরাও পৌঁছে যান। পুরপ্রধান সন্দীপ বিশ্বাস, অন্য কাউন্সিলররাও আসেন। তাঁরা বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। দুপুরে ঘটনার পর থেকে রাতভর আতঙ্কে কেটেছে মিলনপাড়ার বাসিন্দাদের। সুলেখা, নীলিমারা জানান, চোখের সামনে তাঁরা দেখলেন, সিলিন্ডার ফেটে উপরের উঠে গেল আগুনের হলকা। এরপর ওই সময় আর বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখতে কেউ সাহস পাচ্ছিলেন না। গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কে কেটেছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy