এনজেপি স্টেশনে রেলকর্মীদের তৎপরতা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
অসুস্থ হওয়ার প্রায় দু’ঘণ্টা পর দার্জিলিং মেলের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরা থেকে উদ্ধার হল প্রাক্তন এক সিবিআই কর্মীর দেহ। মঙ্গলবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের ঘটনা। রেল পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মলয় রায় (৪৬)। বাড়ি কলকাতার শ্যামনগর এলাকায়। তিনি শিয়ালদহ থেকে দার্জিলিং মেলে শিলিগুড়ি আসছিলেন। গত মাসে নোট বাতিলের পর মাটিগাড়ার একটি উপনগরীর সামনে দুই লক্ষ টাকার নতুন ২ হাজার টাকার নোট-সহ ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তিনিও মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার হন। পরে সকলেই জামিন পান। এ দিন, আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য তিনি শিলিগুড়ি আসছিলেন। সকালে ট্রেনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিলিগুড়ির ডেপুটি রেল পুলিশ সুপার বিজয় কুমার সিংহ বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।’’
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, কিসানগঞ্জ স্টেশনে চা খাওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সাতটা বেজে গিয়েছে। সহযাত্রীদের মাধ্যমে পরিবারের লোকজনদের টেলিফোনে খবরও দেন। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এনজেপি স্টেশনে ট্রেন ঢুকে যায়। তিনি বি-৪ কামরার ৩০ নম্বর আসনে শুয়ে ছিলেন। রেলের তরফে চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়। সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ এনজেপি রেলের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক স্টেশনে যান। ততক্ষণ স্টেশনের একপাশে ট্রেনটিকে দাঁড় করানো ছিল। খবর পেয়ে মলয়বাবুর পরিচিতরাও আসেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘‘চিকিৎসক ট্রেনের কামরায় কখন মারা গিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। ট্রেনটি আসার পর প্রায় দু’ঘন্টা পর চিকিৎসক আসেন। আগে এসে পরীক্ষা করলে অন্যরকম হতেও পারত।’’
এনজেপি স্টেশনে চিকিৎসকদের প্রয়োজন পড়লে তাঁরা কিলোমিটার দু’য়েক দূরের রেল হাসপাতাল থেকে যান। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সকাল ৯টা নাগাদ সেখানে থেকে মৌমিতা বসাক নামের চিকিৎসককে স্টেশনে যেতে বলা হয়। গাড়ি নিয়ে তিনি ১০টা নাগাদ স্টেশনে যান। হাসপাতালের সুপার মন্তব্য করেননি। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রেলের তরফে অসুস্থ রোগী নয়, একটি দেহ রয়েছে বলে জানানো হয়। তিনি কোনও ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রেলের গার্ড, কোচের কর্মী তা দেখেই এনজেপিতে খবর পাঠান। সেখানের কন্ট্রোল রুম থেকে রেল পুলিশ ও হাসপাতালে খবর গিয়েছে। এমনিতে, অসুস্থ যাত্রী হলে রেলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই তা দেওয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে তা দেখাও হয়। এখানে পরীক্ষার পর শংসাপত্র দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল মাত্র। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেন, ‘‘খবর দেওয়ার পর গাড়ি এসেছে, তার পরেই গিয়ে দেখি ওই ব্যক্তি মৃত। মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তে পরিষ্কার হবে।’’
রেল পুলিশ জানাচ্ছে, মলয়বাবু নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে কর্মরত ছিলেন। মাস ছ’য়েক আগে তিনি স্বেচ্ছাবসর নেন। নোট মামলায় প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিতে তিনি শিলিগুড়ি আসতেন। এ দিন আদালতে হাজিরার ছিল। মলয়বাবুর দাদা তুষারকান্তিবাবু এ দিনই কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি রওনা হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সুস্থ শরীরে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে অসুস্থ বলে ফোন পাই। পরে শিলিগুড়ির কয়েকজন পরিচিতের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরাও স্টেশনে যান। এখন শুনছি ভাই ট্রেনেই নাকি মারা গিয়েছে। চিকিৎসক অনেক পরে এসেছিলেন বলে শুনেছি। গিয়ে বিশদে খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy