E-Paper

গ্রাম ছাড়তে চান মানিকের স্ত্রী-সন্তানেরা

বুধবার রাতে ময়নাগুড়ির হঠাৎ কলোনির বাসিন্দা মানিককে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

কৌস্তভ ভৌমিক

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৭
মানিক রায়ের ভেঙে ফেলা বাড়ির ধ্বংস স্তূপ থেকে প্রয়োজয়নিও সামগ্রী ও ছেলের পড়ার বৃষ্টি ভেজা বই খাতা রোদে

মানিক রায়ের ভেঙে ফেলা বাড়ির ধ্বংস স্তূপ থেকে প্রয়োজয়নিও সামগ্রী ও ছেলের পড়ার বৃষ্টি ভেজা বই খাতা রোদে শুকোতে দিছে স্ত্রী সপ্না ও তার বড় ছেলে। ছবি দীপঙ্কর ঘটক

জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির হঠাৎ কলোনিতে গাছে বেঁধে গণপিটুনিতে কংগ্রেস কর্মী মানিক রায়ের খুনে সরাসরি তৃণমূলের দিকে আঙুল তুললেন তাঁর স্ত্রী। মানিকের স্ত্রী স্বপ্না রায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা পুরসভার উপপুরপ্রধান মনোজ রায় অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমার স্বামীর খুনের পিছনে তৃণমূলই রয়েছে।’’ যদিও অভিযোগ উড়িয়ে মনোজ পাল্টা দাবি করেন, যে ১১ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বিজেপির বুথ সভাপতি উত্তম রায় রয়েছেন। শুক্রবার অভিযুক্ত উত্তম রায়ের খোঁজ মেলেনি এলাকায়। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্যাম প্রসাদ বলেন, “নিহতের স্ত্রী-ই বলেছেন, অভিযুক্তেরা সকলে তৃণমূলের কর্মী। বিজেপির সঙ্গে এই ঘটনার যোগ নেই।’’ ইতিমধ্যে এই ঘটনায় পাঁচ জন গ্রেফতার হয়েছে। ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ জানান, শুক্রবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় নতুন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

বুধবার রাতে ময়নাগুড়ির হঠাৎ কলোনির বাসিন্দা মানিককে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, সক্রিয় কংগ্রেস কর্মী মানিকের সঙ্গে এলাকার বেশ কিছু তৃণমূল নেতার বহু দিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। মানিক তাঁদের বিরুদ্ধে জর্দা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার অভিযোগ করেন। এর জেরে দীর্ঘদিন পরিবারটি এলাকাছাড়া ছিল বলে অভিযোগ। গত রবিবার মানিক বাড়িতে ফিরে এলে, নতুন করে ‘অত্যাচার’ শুরু হয় বলে দাবি পরিবারের।

এ দিন গ্রামের একাধিক বাড়ি ছিল তালাবন্ধ। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে পুলিশি তল্লাশির জেরে ওই পরিস্থিতি। জেলা কংগ্রেসের তরফ থেকে মানিকের ভাঙা বাড়ি মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও, গ্রামে আর থাকতে চাইছে না মানিকের ছেলেরা। স্ত্রী স্বপ্না রায়েরও আশঙ্কা, ফের হামলা হতে পারে তাঁদের উপরে। তিনি বলেন, “জানি না, আবার কী বিপদ হবে! স্বামীর ভিটে বিক্রি করে ছেলেদের নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব।’’ বুধবার রাতের কথা ভেবে দু’দিন বাদেও শিউরে উঠছে ছেলে দু’টো। কাঁদতে-কাঁদতে বড় ছেলে বলে, ‘‘বাবাকে যখন গাছে বেঁধে মারধর করা হচ্ছিল, বাবা ‘জল-জল’ করে গোঙাচ্ছিল। কেউ জল দেয়নি। আমাদেরও দিতে দেয়নি। উল্টে, বাবার গলা টিপে ধরেছিল।”

প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে এখন কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘ঘরছাড়া কংগ্রেস কর্মী ঘরে ফিরলে, খুন হবেন। শ্রাদ্ধের কাজ করেই তাঁর পরিবারকে চলে যেতে হবে। এটা বাংলার গণতন্ত্র? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি গিয়ে সারা দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলবেন আর তাঁর রাজ্যে গণতন্ত্রের এই অবস্থা?’’ তিনি জানান, পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে প্রদেশ কংগ্রেসের একটি দল যাচ্ছে ময়নাগুড়িতে।

তৃণমূলের ময়নাগুড়ি ১ ব্লক সভাপতি তথা ময়নাগুড়ি পুরসভার উপপুরপ্রধান মনোজ রায় অবশ্য বলেন, ‘‘যে কোনও ঘটনায় তৃণমূলকে জড়িয়ে দেওয়া, এখন বিরোধীদের অভ্যাস। সবই রাজনৈতিক কারণে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Maynaguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy