Advertisement
E-Paper

সহায়ক মূল্য ফড়ে খেয়ে নেবে না তো

বৃহস্পতিবার অরুণ জেটলির পেশ করা বাজেট তিনি শোনেননি। তবে খবর পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার উৎপাদন খরচের অন্তত দেড়গুণ বেশি টাকা সহায়ক মূল্য হিসেবে দেবে। আফজল মিয়াঁ বললেন, ‘‘শুনতে তো ভালই লাগল। কিন্তু আমরা সহায়ক মূল্য হাতে পাব তো! নাকি মাঝপথেই সেগুলিও ফড়েরা লুটবে!’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৭

গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের হাটে ভ্যানে চাপিয়ে পাট নিয়ে গিয়েও পরপর দু’দিন ফিরে আসতে হয়েছিল। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জলপাইগুড়ির বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামে দালাল-ফড়েদের নিয়মিত যাতায়াত। তাদের বিক্রি করলে দাম মেলে না বলে আফজল মিয়াঁ, সুকু আলি-রা স্থির করেছিলেন নিজেরাই হাটে যাবেন। দু’দিন ফেরার পরে জলের দরে দালালের হাতেই তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন জমির ফসল। গত মরসুমের এই অভিজ্ঞতা এখনও টাটকা প্রৌঢ় আফজলের। বৃহস্পতিবার অরুণ জেটলির পেশ করা বাজেট তিনি শোনেননি। তবে খবর পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার উৎপাদন খরচের অন্তত দেড়গুণ বেশি টাকা সহায়ক মূল্য হিসেবে দেবে। আফজল মিয়াঁ বললেন, ‘‘শুনতে তো ভালই লাগল। কিন্তু আমরা সহায়ক মূল্য হাতে পাব তো! নাকি মাঝপথেই সেগুলিও ফড়েরা লুটবে!’’

কেন্দ্রীয় বাজেটের ঘোষণায় উত্তরবঙ্গের সব প্রান্তের গ্রামের কৃষকরাই স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে আশঙ্কাও রয়েছে। পাটের কেন্দ্রীয় সহায়ক মূল্য আগে থেকেই রয়েছে। তাতেও অভাবি বিক্রি রোখা যায়নি বলে দাবি। অনেক ক্ষেত্রে দালালদের মাধ্যমে না গেলে সরকারি সহায়ক মূল্যও মেলে না বলে অভিযোগ। সরকারি ঘোষণার যথাযথ রূপায়ণও দাবি করেছেন গ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা। ফাঁসিদেওয়ার কৃষক সুকুমার মল্লিকের কথায়, ‘‘অনেক কথাই তো শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ঠিক উল্টো হচ্ছে। তা ছাড়া গ্রাম থেকে বিক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার খরচও রয়েছে। সত্যি যদি উৎপাদন খরচের দেড়গুণ টাকায় কিনে নেওয়া হয় তবে তো খুবই ভাল।’’

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সামগ্রিক অর্থনীতির লাভ হবে বলে মনে করছেন বণিকসভা সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ শাখার সদস্য তথা আয়কর বিশেষজ্ঞ সুজিত রাহা। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কৃষকরা ফসলের ভাল দাম পেলে আখেরে অর্থনীতি উপকৃত হবে। সুজিতবাবু বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতেই হবে। যদি ঠিকঠাক রূপায়ণ হয় তবে গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের হাতেও টাকা আসবে। গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত হবে।’’ কেন্দ্রের নতুন স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প থেকে গরিব পরিবারকে গ্যাস এবং বিদ্যুত দেওয়ার ঘোষণাও গ্রাম-মুখি বলে মনে করছেন তিনি। সিআইআই-এর তরফেও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। দেশের ২২ হাজার গ্রামের বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজিটাল ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসার কেন্দ্রীয় বাজেটের সিদ্ধান্তকে সিআইআই স্বাগত জানিয়েছেন। তবে সিপিএমের কাউন্সিলর ততা আয়কর আইনজীবী কমল অগ্রবাল বলেন, ‘‘কৃষিতে সহায়ক মূল্য দালালদের পকেটেই যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। কৃষি খামারে কর ছাড়ের সুযোগ নিতে অনেক চক্র সক্রিয় হবে।’’

কৃষি বাজার তৈরি করায় গ্রামে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী। দক্ষিণ দিনাজপুরে জেলা তৃণমূল নেতা প্রবীর রায়ের দাবি, কেন্দ্রীয় বাজেটে ফসলের সরকারি সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করলেই হবে না। জেলা থেকে ধান চাল বিদেশে রফতানির উদ্যোগ না নিলে চাষিরা প্রকৃত লাভের মুখ দেখতে পারবেন না। কেন্দ্রের বাজেটে নতুন স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পে ১০ কোটি পরিবারের ৫০ কোটি বাসিন্দাকে আওতায় আনার ঘোষণা হয়েছে।

Jute Farmers Helpful Price
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy