জমি থেকে ধান কেটে নেওয়ার পর শূন্য মাঠ, জলপাইগুড়িতে। ছবি - সন্দীপ পাল।
শহর থেকে সন্ন্যাসীহাটের দূরত্ব অন্তত ছয় কিলোমিটার। রাস্তার দু’দিকে শূন্য ধান খেত। কোথাও কেটে নেওয়া ধান গাছের সোনালি গোঁড়াটুকু মাটিতে মাথা তুলে আছে। কোথাও আলু বোনা হয়েছে। কিন্তু কেটে নেওয়া ধান সব গেল কোথায়?
সন্ন্যাসীহাটের সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে এ দিন ধান নিয়ে এসেছিলেন মাত্র ছ’জন কৃষক। এই কেন্দ্রে মাস দুয়েকে মোট ধান কেনা হয়েছে মাত্র ২৮ টন। ধান কাটা, ঝাড়াই, মাড়াই হয়ে গিয়ে কৃষকেরা আলু চাষ করছে। তার পরেও সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান আসছে না কেন? শুধু সন্ন্যাসীহাটের ধান ক্রয় কেন্দ্র নয়, জেলা জুড়েই এই পরিস্থিতি। জলপাইগুড়ি জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা এ বছর ২ লক্ষ ২১ হাজার টন। নভেম্বরে ধান কাটা হয়ে যাওয়ার পরে ডিসেম্বরের অর্ধেক পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলায় সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান এসেছে প্রায় ১০ হাজার টন। লক্ষ্যমাত্রার চার ভাগের এক ভাগ ধানও এখনও কিনতে পারেনি জলপাইগুড়ি জেলা। পিছিয়ে রয়েছে কৃষকদের নথিভুক্তিকরণেও। গত বছর ৭০ হাজার কৃষক ধান বিক্রি করেছিলেন সরকারি কেন্দ্রে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার কৃষক নাম লিখিয়েছেন। দু’ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে নেই জেলা।
কেন এমন হল? জেলার খাদ্য নিয়ামক দাওয়া ওয়াঙ্গেল লামা বলেন, “এ বছর ধান বিক্রির প্রবণতা খানিকটা কমই। তবে এখন সবে ডিসেম্বর, আরও সময় পড়ে রয়েছে। কৃষকেরা এখনও ধান ঝাড়াই, মাড়াই করছেন।”
যদিও বাস্তবে কৃষকদের দাবি অন্যরকম। সোমবার সন্ন্যাসীহাটে ধান নিয়ে আসা দুলালচন্দ্র রায় বললেন, “আজ নিয়ে এলাম, আর আসব না। ধান অনেকটাই কেটে রেখে দিচ্ছে।” সরকারি নির্দেশ রয়েছে, ধলতা তথা ওজনের থেকে কিছু বাদ দেওয়া যাবে না। অথচ, সরকারি কেন্দ্রে প্রকাশ্যেই ওজন থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেকটা ধান। কৃষকদের দাবি, কুইন্টাল থেকে চার থেকে পাঁচ শতাংশ ধান বাদ দেওয়া হচ্ছে। দুলালচন্দ্র রায় ১৫ কুইন্টাল ধান এনেছিলেন, চার শতাংশ হারে হিসেব করে ৬০ কেজি ধান ওজন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুলাল বলেন, “এই ধানের দাম খোলাবাজারে অন্তত আটশো টাকা পেতাম, সরকারি কেন্দ্রে পুরোটাই নষ্ট হল।” জেলা খাদ্য নিয়ামক বললেন, “ওজন থেকে বাদ দেওয়া হয় না, এমন কোনও নির্দেশ নেই।” শোভারহাটের বাসিন্দা এ দিন ধান নিয়ে আসা করেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “সরকারি কেন্দ্রে ধান আনলে গোটা দিনই নষ্ট।”
সকাল ১১টার মধ্যে কৃষকের ধান নিয়ে আসার কথা সরকারি কেন্দ্রে সরকারি কেন্দ্রে। যদিও সোমবার দুপুর দুটোয় দেখা গেল সন্ন্যাসীহাটের কেন্দ্রের কৃষকেরা ধান নিয়ে বসে রয়েছেন। কিন্তু ধান কেনা শুরু হয়নি। এক কৃষকেরা কথায়, “সকালে এসেছি কত দূর থেকে। ধান বিক্রি করে ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। মাঠে কাজ করতে পারব না। এ সব কারণেই সরকারি কেন্দ্রে আসি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy