Advertisement
E-Paper

বীজ না কিনেই খালি হাতে ফিরছেন চাষিরা

হাটে ৫০ কেজি আলুর বীজ বেচতে এসে অর্ধেকের বেশি আলু ঘরে ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছে ক্ষুদ্র হাট ব্যবসায়ী মফিজ মিঁয়াকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
মাথায় হাত মফিজদের।— নিজস্ব চিত্র

মাথায় হাত মফিজদের।— নিজস্ব চিত্র

হাটে ৫০ কেজি আলুর বীজ বেচতে এসে অর্ধেকের বেশি আলু ঘরে ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছে ক্ষুদ্র হাট ব্যবসায়ী মফিজ মিঁয়াকে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা তেলিঘাটা সাপ্তাহিক হাটে আলু চাষের মরসুমের শুরুতে খুচরোর অভাবে প্রয়োজনীয় বীজ হাট থেকে কিনতে না পেরে চরম সমস্যার মুখে পড়ে গিয়েছেন ছোট আলু চাষিরাও। তাঁদের একজন ষাটোর্ধ্ব মফিজ মিঁয়া হাট করেই পেটের ভাত জোগাড় করেন। গত কয়েকদিনে পুরনো ৫০০ এবং হাজার টাকা বাতিলের গেড়োয় পড়ে তার রোজগার কমেছে। তাঁর কথায়, গত দু’টি হাটে আসা-যাওয়ায় গাড়িভাড়ার টাকা কোনও মতে উঠেছে। রোজগারপাতি হচ্ছে কই?

বুধ ও শনিবার সপ্তাহে দু’দিন ওই তেলিঘাটা হাটের উপর নির্ভর করে তপনের আউটিনা অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামবাসীদের কেনাবেচার সঙ্গে ওই অঞ্চলের ছোট বৃত্তি ব্যবসায়ীদের অর্থনীতি জড়িত। প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে গঙ্গারামপুরের নয়াবাজার এলাকা থেকে গাড়িতে চেপে নিয়মিত ওই তেলিঘাটা হাটে মরসুমি ফসল বেচে আসছেন ছোট হাট ব্যবসায়ী মফিজ মিঁয়া। দুই ছেলে আলাদা থাকেন। স্ত্রী ও এক মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সেও দুপুর ১টার আগেই হাটে চলে আসেন। ট্রাক থেকে মালপত্র নামিয়ে হাট চত্বরে নির্দিষ্ট জায়গায় মাটিতে খদ্দেরের আশায় মাটিতে বিছিয়ে বসেন আলুবীজ। তার মতো সার ধরে পর পর নানা জাতের আলুবীজ নিয়ে অন্য বিক্রেতারা বসে যান।

বিকেল প্রায় ৩টা। ওই আলুবীজ হাটে খদ্দের চাষিদের দেখা নেই। পসরার মাঝে চুপ করে বসে অপেক্ষা। আর মাঝেমধ্যে ক্রেতা টানতে পরিচিত চাষিদের দেখে হাঁকডাক মফিজবাবু। খানিক পরে তার কাছে এলেন পরিচিত এক চাষি। পাশে বসে নোট সমস্যা নিয়ে কথা শুরু করলেন দু’জনে। চাষি শুধোয়, ‘‘মিঁয়া হামার এলাকার আশেপাশে কোনও ব্যাঙ্ক নাই। লস্করের ব্যাঙ্কে এসেছিলাম বই করতে। হয়নি। হাতে ৫০০-হাজারের দুটা নোট। সওদা হবে তো?’’ ৩০ শতক জমিতে আলু বুনতে জমি তৈরি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘৫০০টাকার নোট না নিলে দুই ধারা (১০ কেজি) বীজ কিনবো কী করে?’’ বলেন চাষি। মফিজ মিঁয়ার উত্তর, ‘‘দুই ধারার দাম ১০০টাকা। তোরে ৪০০টাকা ফেরত দেব কেমন করে? এমনিতে তো বিক্রিবাট্টা নাই। কবে অবস্থা পাল্টাবে কিছুই বুঝছি না। বাকিতে নে। পরের হাটে শোধ দিবি।’’

তপনের ওই সমস্ত গ্রামগুলিতে কোনও ব্যাঙ্ক নেই। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এক-দুটি সাব পোস্ট অফিস খোলা থাকলেও তাতে গত এক সপ্তাহ যাবত টাকা নেই। তাই ওই সমস্ত এলাকা থেকে ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আউটিনা অঞ্চল অফিসের মোড়ে লস্করহাট মোড়ে এসবিআই ব্যাঙ্কের একমাত্র শাখা নির্ভর করে একাংশ গ্রামবাসীর লেনদেন চলে।

সকালে উঠে সংসারের কেনাকাটা করতে ওই শাখা অফিসে ছুটেছিলেন ধীরেন বর্মন, রাজু বিশ্বাস, রতন মল্লিকেরা। তার আগে থেকে সেখানে দীর্ঘ লম্বা লাইন। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অধিকাংশ গ্রামবাসী টাকা পাচ্ছেন না। ওই শাখা চত্বরে থাকা একমাত্র এটিএম গত পাঁচ দিন থেকে বন্ধ। পারিলার কৃষিজীবী জয়ন্ত বর্মন, আনন্দ সরকার খেদের সঙ্গে বলেন, ‘‘এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিস নেই। গত সাত দিন ধরে ওই দূরের লস্করহাট ব্যাঙ্কে ঘুরেও প্রয়োজনীয় টাকা মেলেনি। ৫০০টাকার নোট কোনও ব্যবসায়ী নিচ্ছেন না। খুচরোর অভাবে এদিন হাটে গিয়েও বাজার করতে পারিনি।’’ আলুবীজও কেনা হয়নি জয়ন্তবাবুদের।

গঙ্গারামপুরের নয়াবাজার থেকে আলুবীজ হাটে বিক্রি করতে আসা বৃদ্ধ মফিজ মিঁয়ার মতো বালুরঘাটের চকভৃগু থেকে ষষ্ঠী সরকার, তপনের শিওল থেকে প্রমিল মন্ডলেরা বলেন, খুচরো টাকার অভাবে ক্রেতার দেখা মিলছে না। তেলিঘাটা হাটে প্রায় ২০০কুইন্টাল আলুবীজ নিয়ে পসরা সাজিয়ে ছিলেন ছোট ব্যবসায়ীরা। দিনের শেষে ৫০ কুইন্টাল আলুও বিক্রি হয়নি বলে তাদের দাবি।

Seed Farmer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy