Advertisement
E-Paper

ছোটরা অরণ্যে, মেয়েরা সব পাখি

ঈদে-পুজোয় বাঙালির ফ্যাশন মানেই সিরিয়ালের রঙে রাঙানো। বলিউডি ‘মুঘল-এ-আজম’ সেই কবে, ১৯৫৭-য় সাদা-কালো সিনেমার যুগে ইতিহাসকে তুড়ি মেরে জাহাঙ্গির-হৃদি ‘আনারকলি’-কে পাথরে গেঁথে দিয়েছিল। সেই আনারকলি ‘মরিয়া মরে নাই’, বরং বড় ঘেরের চুড়িদারে এ দেশে অমর হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০২:০৬
মালদহে বিকোচ্ছে করাচি চুড়িদার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

মালদহে বিকোচ্ছে করাচি চুড়িদার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ঈদে-পুজোয় বাঙালির ফ্যাশন মানেই সিরিয়ালের রঙে রাঙানো।

বলিউডি ‘মুঘল-এ-আজম’ সেই কবে, ১৯৫৭-য় সাদা-কালো সিনেমার যুগে ইতিহাসকে তুড়ি মেরে জাহাঙ্গির-হৃদি ‘আনারকলি’-কে পাথরে গেঁথে দিয়েছিল। সেই আনারকলি ‘মরিয়া মরে নাই’, বরং বড় ঘেরের চুড়িদারে এ দেশে অমর হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু বাঙালি অন্তরে ইদানীং কখনও ‘বাহা’ তো কখনও ‘পাখি’ দেখে আহা! হাজির ‘কিরণমালা’ বা ‘অরণ্য’ও। তবে ঈদের বাজারে কিন্তু পাল্লা দিয়ে বড় দাঁও মারতে চলেছে ফের সেই মোগলাই রুচি— চেনা আনারকলির পাশাপাশি খানিক অচেনা করাচি চুড়িদারও।

এ বারে ঈদ আগে হওয়ায় মাঠের পাট এখনও ওঠেনি। যাঁরা সব্জি চাষে ভরসা করেছিলেন, দু’দফার টানা বৃষ্টি তাঁদেরও দাগা দিয়েছে। অনেকেরই হাতে নগদ টাকা নেই। কিন্তু আর দিন তিনেকের মধ্যে ঈদ। শেষ বেলায় বাজার জেগে উঠেছে। তিন দিনের টানা বৃষ্টি ছেড়ে যেতেই খদ্দের (খদ্দেরনিরাই দলে ভারী) দোকানে-দোকানে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। আবার খদ্দের টানতে অনেক দোকান ভাল ছাড়ও দিচ্ছে।

মালদহের চাঁচলে তেড়ে বিক্রি হচ্ছে আনারকলি সালোয়ার! হরিশ্চন্দ্রপুরে আবার আনারকলি ছাড়াও তুমুল চাহিদা সাওয়ারিয়া ও করাচি সালোয়ারের। সাওয়ারিয়া প্রায় আনারকলির মতোই। তবে করাচি সালোয়ার লম্বাটে ধরনের, দু’পাশে কাটা, অনেকটা যেন স্কিন ফিট। উপরে ঝকমকে পাথর, পুথি বসানো জ্যাকেটও রয়েছে। তবে পাথর ও সুতোর কাজ করা আনারকলির বিক্রিই সবচেয়ে বেশি। সবেরই দাম বারোশো থেকে চার হাজারের মধ্যে।

ইংরেজবাজারের চিত্তরঞ্জন পুরবাজার, নেতাজি মার্কেট, বিচিত্রা মার্কেটে ব্যপক ভিড় উপচে পড়েছে। বহু বস্ত্র ব্যবসায়ীই জানাচ্ছেন, চিরাচরিত লেগিন্সের তুলনায় এ বার জেগিন্সের (শক্ত কাপড়ে তৈরি, নীচে চুড়ি পা নেই) বাজার ভাল। চাঁচলের বস্ত্র ব্যবসায়ী বাবু পাল জানান, নেটের চুড়িদারেরও বিক্রি ভাল। হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, যাঁদের শাড়ি পছন্দ তাঁরা এ বার জামদানির দিকে ঝুঁকছেন। ও দিকে, নেটের শাড়িরও বেশ চল।

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, লালগোলা, ডোমকলে আবার দেদার বিকোচ্ছে ‘পাখি’ চুড়িদার, ‘কিরণমালা’ শাড়ি। নদিয়াতেও তা-ই। সোমবার দুপুরে করিমপুরের দোকানে ‘পাখি’ দেখতে এসে বছর একুশের শিক্ষিকা নাসিম বানু হাসেন, “অনেক দিন আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম, কিনব।” আর এক শিক্ষিকা আফরোজা বানুর ব্যাখ্যা, “আসলে ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের ‘পাখি’ আর ‘অরণ্য’ এই দু’টি চরিত্র খুব জনপ্রিয় হয়েছে কি না!’’ মুরুটিয়ার নবম শ্রেণির ছাত্রী ফতিমা খাতুনেরও বাবার কাছে একই বায়না।পুরুষদের ফ্যাশনে অবশ্য তেমন নতুন কিছু নেই। সেই পঞ্জাবি, কুর্তা, শেরওয়ানি। আর নমাজের জন্য নেটের তৈরি সুতি কাপড়ের টুপি। টিনএজার-রা খুঁজছে পাঠানি পঞ্জাবি, যা শরীরে আঁটো হয়ে থাকবে। সামনে কুঁচকোনো জিন্‌সের পাঞ্জাবিরও বাজার রয়েছে।

মেয়েদের সাজের জন্য মনোহারি দোকানেও ভিড় বেড়েছে। তবে কাচের চুরির বিক্রি আগের মতো আর নেই।

নতুন কেতার জুতোর জোগান কিন্তু তেমন নেই। রংবেরঙের পাথর বসানো চটি ছাড়া চোখ টানছে না প্রায় কিছুই। নদিয়ার জুতোর ব্যবসায়ী প্রীতম সাহা বলেন, “ঈদের জন্য বিক্রি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু অনেকেই তাদের পছন্দের জুতো চেয়ে পাচ্ছেন না। কেউ নিজের জামার রঙ দেখিয়ে সেই রঙের ফিতে বাঁধা জুতো নিতে চাইলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাচ্ছি।”

eid fashion rain nadia murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy